ব্লকচেইন কি?
ব্লকচেইন হল মূলত এক ধরণের শক্তি যা বিটকয়েন গুলোকে গতিশীল করে, বিটকয়েনের মধ্যে স্থানান্তরকে সহজ করে এবং এর সব রকম লেনদেন রেকর্ড করে রাখে। আসুন বিষয়টিকে আরো সহজ করে বোঝার চেষ্টা করি।
ধরুন এক ভদ্রলোক প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রামে থাকা বাবাকে ৫ হাজার টাকা পাঠালেন। তো এই লেনদেন ব্যবস্থাটিকে যদি একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে ভদ্রলোক হচ্ছেন প্রথম পক্ষ ও তার বাবা হচ্ছেন দ্বিতীয় পক্ষ অপরদিকে ব্যাংকিং সিস্টেম হলো তৃতীয় পক্ষ। তাহলে কি দাড়ালো এই ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করা সহ প্রায় সব ধরণের কার্যকলাপ সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। তার মানে দুইজনের কাছে অর্থ আদান প্রদান করতে যেসব সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন পড়ে তার সবটাই ব্যাংক তার সেবার মাধ্যমে দিয়ে থাকে। যেটাকে আমরা ব্যাংকিং সিস্টেম বলে থাকি।
সংক্ষেপে ব্লকচেইন:
ব্লকচেইন = ব্লক + চেইন
এই সিস্টেমে প্রতিটি ব্লক এক একটি একাউন্ট যার প্রতিটি লেনদেন ব্যবস্থাপনা চেইন আকারে পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি ব্লক হ্যাশিং (Hashing) এর মাধ্যমে উচ্চ মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যার ফলে কেউই এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে?
ব্লকচেইন মূলত একটি P2P পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে যেখানে ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি ব্লকের ডেটা ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকা যেকোনো ব্যাক্তি ব্লকগুলোকে ভেরিফাই করতে পারে। শুধু এর জন্য একটু একাউন্ট থাকলেই হবে।
সহজ ভাষায় ব্লকচেইন হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটেড ওপেন লেজার। আরেকটু সহজ ভাষায় বলি। আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন অফিস-আদালতে একটি বড় খাতা থাকে যাতে বিভিন্ন তথ্যাদি লিপিবব্ধ করা হয়। এই খাতাকে বলা হয় লেজার। যা শুধু সেই অফিসের স্টাফ ব্যতিত কেউ দেখতে পারে না। ঠিক ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করা হয় তা চেইন স্টিমে একটি লেজারে স্টোর হয়ে যায়। যা সকলে দেখতে পারে।
মনে করি, আমি কোন ব্যাক্তির সাথে লেনদেন করব । তহলে আমি যখন সেই ব্যক্তির ঠিকানায় পাঠাবো তখন আমার সেই ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে নেওয়া হবে। এরপর সেই ব্লকটিকে সিকিউরিটি পারপাসে একটি # হ্যাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর এক একটি ব্লক অপরটির সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি ব্লকে তার পূর্বের ব্লকের এ্যড্রেস থাকে এইভাবে একটি ব্লককে আরেকটি ব্লকের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
অপরদিকে একই সময়ে যত ট্রান্জেকশন হয় তার সকল ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যার জন্য হাজার হাজার কম্পিউটার কাজ করে এবং সকল কম্পিউটারে সেই ব্লকটির একটি করে কপি থাকে। এই ভাবেই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বা চেইনের সৃষ্টি হয়। আর চেইনের মাধ্যমে যে নথিপত্র ভবিষ্যতের জন্য জমা হয় এটিকেই লেজার বলা হয়। যেখান থেকে আমারা সকলেই লেনদেন গুলো দেখতে পাই।
ব্লকচেইনের সুবিধা ও অসুবিধা:
ব্লকচেইনের অসুবিধা :
ব্লকচেইন যে শুধু সুবিধা প্রদান করে তা কিন্তু নয়। ব্লকচেইনের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তার মধ্যে ২ টি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা হলো:
১. নেটওয়ার্কের গতি
আমরা উপরে আলোচনা করেছি, এটি প্রায় ১০ মিনিট সময় নেয়। যাচাই করতে এবং চেইনে একটি ব্লক যুক্ত করতে। অন্যান্য লিডিং ব্লকচেইনের জন্য এই লেটেন্সি প্রায় ১ মিনিট। যা একটি রিলেশনাল ডাটাবেস ডেটা যোগ করতে যেমন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লাগে তার চেয়ে বেশি। এই উচ্চ বিলম্বতা উচ্চ ভলিউমের ক্ষেত্রে সঠিক ডেটা প্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এইভাবে এটি ERP সমাধানগুলির জন্য উপযুক্ত হবে না।
২. আইনি গ্রহণযোগ্যতা:
ব্লকচেইন যেহেতু বেশ কিছু দেশে বৈধতা দেয়নি তাই এটি সম্পূর্ন রূপে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। ব্লকচেইনের কোনো কিছু কোনো দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না । এটি সম্পূর্ণ ব্যাবহারকরীর কাছে সুরক্ষিত থাকে। তবে সমস্যা হলো যদি কোনো সময় আপনার লেনদেনে কোনো সমস্যা হয় আপনি আইনি ভাবে কেনো সাহায্য পাবেন না। এটি ব্লকচেইনের একটি বড় অসুবিধা।
ব্লকচেইন কি হ্যাক করা সম্ভব
ব্লকচেইন হ্যাক করা প্রায় একেবারেই ইম্পসিবল। ব্লকচেইন খুবই উন্নত সিকিউরিটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তারপরেও যদি কেউ ব্লকচেইন টেকনোলজিকে হ্যাক করে এর তথ্যের মাঝে কোন গরমিল করতে চায় তবে তা করা অসম্ভব। কারন তা করতে হলে, তাকে একই সময়ে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে।
কারন আগেই বলেছি প্রতিটি ট্রান্জেকশন তৈরি হওয়া মাত্রই তার তথ্য হাজার হাজার কম্পিউটারে পৌছে যায়। আর ততোধিক ট্রান্জেকশন মিলে একটি ব্লক তৈরি হতে প্রায় সময় লাগে কমবেশি ১০ মিনিট মত। আর তাই একটি ব্লকের সম্পূর্ণ তথ্য পরিবর্তন করতে; হ্যাকারের হাতে ১০ মিনিটের কম সময় থাকবে। আর এই সময়েরে মধ্যে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করা কাল্পনিক।