Search
Close this search box.

অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি: রিকন্ডিশন্ড জাপানি গাড়ি কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে

newsrooms24.com

বর্তমান বিশ্বে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নেই নয়, বরং কর্মসংস্থান, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশেও অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

দেশের ক্রেতারা রিকন্ডিশন্ড জাপানি গাড়ির দিকে বেশি ঝুঁকছেন, কারণ এই গাড়িগুলো গুণমান, প্রযুক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এর ফলে, ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে এবং তারা গাড়ি কেনার প্রক্রিয়ায় আরও বেশি তথ্য জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কী?

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি হলো ব্যবহৃত গাড়ি, যা বিদেশে ব্যবহৃত হওয়ার পর বাংলাদেশে পুনরায় মেরামত মাধ্যমে নতুনের মতো করে প্রস্তুত করা হয়। এই গাড়িগুলো সাধারণত বিভিন্ন জাপানি ব্র্যান্ডের হয়, যেমন টয়োটা, হোন্ডা, সুজুকি ইত্যাদি।

নতুন গাড়ির তুলনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সুবিধা অনেক বেশি, কারণ এগুলোর দাম নতুন গাড়ির তুলনায় প্রায় ৩০% থেকে ৫০% কম থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি নতুন টয়োটা করোলার দাম প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা হতে পারে, তবে একটি ৩-৫ বছরের পুরনো রিকন্ডিশন্ড টয়োটা করোলা ১২-১৫ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া সম্ভব। এই ধরণের গাড়িগুলোর মাইলেজও সাধারণত ভালো হয়, ফলে দীর্ঘমেয়াদে এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মধ্যে রয়েছে সেডান, এসইভি এবং হ্যাচব্যাক। সেডান গাড়িগুলোর মধ্যে টয়োটা করোলা ও হোন্ডা সিভিক জনপ্রিয়। এসইভির মধ্যে টয়োটা হাইল্যান্ডার এবং সুজুকি ভিটারা উল্লেখযোগ্য। হ্যাচব্যাক মডেল হিসেবে হোন্ডা ফিট এবং টয়োটা ইয়্যারিসেরও চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি মডেলের নিজস্ব বিশেষত্ব এবং সুবিধা রয়েছে, যা ক্রেতাদের পছন্দের ওপর নির্ভর করে।

জাপানি গাড়ির বিশেষত্ব

জাপানি গাড়িগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের বৈশিষ্ট্য, গুণমান এবং আধুনিক প্রযুক্তির জন্য পরিচিত। সাধারণত, জাপানি গাড়িগুলো উন্নতমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়, যা গাড়িগুলোর স্থায়িত্ব বাড়ায়। এসব গাড়ির গুণমান এতটাই ভাল যে, এগুলো সাধারণত ১,০০,০০০ কিমি বা তারও বেশি ব্যবহারের পরেও কার্যকরী থাকে। এছাড়া, জাপানি গাড়িগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন এডভান্সড ড্রাইভিং অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম (ADAS), জিপিএস নেভিগেশন, রিভার্স ক্যামেরা এবং সেফটি ফিচার যেমন এয়ারব্যাগ ও অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এইসব ফিচার গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাকে অনেক উপভোগ্য করে তোলে পাশাপাশি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে।

আরও পড়ুন  ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের নিয়ে এফ-কমার্স সামিট

রিকন্ডিশন্ড জাপানি গাড়ির বাজারে চাহিদার অন্যতম প্রধান কারণ হলো তাদের মাইলেজ। জাপানি গাড়ির ইঞ্জিন সাধারণত উন্নত প্রযুক্তির কারণে খুবই মাইলেজ বান্ধব, যা শহরের এবং হাইওয়ে উভয় অবস্থাতেই ভালো সার্ভিস প্রদান করে। এর ফলে, ক্রেতারা কম খরচে দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতে সক্ষম হন। এছাড়া, জাপানি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সহজেই পাওয়া যায় এবং দক্ষ মেকানিকেরও অভাব নেই, যা ক্রেতাদের জন্য একটি বড় সুবিধা।

কেনার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে

গাড়ি কেনার আগে কিছু বিষয় সতর্কতার সাথে খতিয়ে দেখাটা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, গাড়ির ইতিহাস এবং ব্যবহারের তথ্য যাচাই করা উচিত। গাড়িটি পূর্বে কোনো দুর্ঘটনায় পড়েছে কি না, তা জানার জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে এর মধ্যে অকশন শীট ভেরিফিকেশন পদ্ধতি অন্যতম । এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়, যা ক্রেতাকে একটি উপযোক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, গাড়ির সার্ভিস এবং রক্ষণাবেক্ষণের রেকর্ড সংগ্রহ করা উচিত। নিয়মিত সার্ভিসিংয়ের ইতিহাস ও প্রয়োজনীয় মেরামত সংক্রান্ত তথ্য জানা থাকলে, গাড়ির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।

গাড়ির ফিটনেস সম্পর্কে কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা জরুরি। বাহ্যিক অবস্থা, যেমন গাড়ির বাইরের অংশে দাগ, স্ক্র্যাচ কিংবা মরিচার চিহ্ন আছে কি না, তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইঞ্জিনের ভিতরকার অবস্থা, তেল, জল ও অন্যান্য তরল পদার্থের অবস্থা পরীক্ষা করা উচিত। এসব তথ্য ক্রেতাকে গাড়িটির প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিবে, যাতে তারা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কাগজপত্র ও আইনগত বিষয়গুলোও গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষা করতে হবে। গাড়ির নিবন্ধন সনদ ও মালিকানা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করবে যে গাড়িটি চুরি হয়নি এবং এর মালিকানা সঠিক। এছাড়া, গাড়ির বর্তমান ইন্স্যুরেন্সের স্ট্যাটাস পরীক্ষা করা আবশ্যক। ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ, প্রিমিয়াম এবং কভারেজ সম্পর্কে জানলে, ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন  জাপান আইটি উইকে বাংলাদেশি ৬ প্রতিষ্ঠান

এছাড়া, একজন দক্ষ মেকানিকের মাধ্যমে গাড়ির মেকানিক্যাল পরীক্ষা করানো উচিত, যা গাড়ির সাধারণ অবস্থা বুঝতে সহায়তা করবে। সাথেসাথে, গাড়িটি চালিয়ে দেখে নিন। ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন কেমন কাজ করছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের যাচাইকরণ ক্রেতাকে গাড়ির প্রকৃত কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা প্রদান করবে।

বাজেট

গাড়ি কেনার সময় বাজেট নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম সাধারণত গাড়ির ব্র্যান্ড, মডেল এবং অবস্থার ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ৫ বছরের পুরনো টয়োটা করোলার দাম ১২-১৫ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে, তবে কিছু বিশেষ মডেল এবং অবস্থার ক্ষেত্রে দাম আরও বেশি হতে পারে। গাড়ির জন্য বাজেট নির্ধারনরে সময় অতিরিক্ত খরচ যেমন রক্ষণাবেক্ষণ, ইন্স্যুরেন্স এবং অন্যান্য খরচও মাথায় রাখতে হবে। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বছরে ১৫-২০% হতে পারে, যা ক্রেতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কেনার প্রক্রিয়া

গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সহজ হওয়া উচিত। প্রথমত, স্থানীয় বা অনলাইনে নির্ভরযোগ্য ডিলার খুঁজুন। ডিলারের রিভিউ এবং ক্রেতাদের মতামত যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এটি আপনাকে ডিলারের সম্পর্কে ধারণা দেবে। অনলাইনে বিভিন্ন ডিলারের দাম, গাড়ির অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য তুলনা করুন এবং স্থানীয় ডিলারে গিয়ে সরাসরি গাড়ির অবস্থা দেখুন।

দরদাম করার সময় গাড়ির বাজার মূল্য সম্পর্কে জানা জরুরি। দরদাম করার কৌশল হিসেবে আপনি আপনার বাজেটের কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে পারেন এবং একটি যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনা দিতে পারেন।

রক্ষণাবেক্ষণ

গাড়ি কেনার পর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সার্ভিসিং এবং মেরামতের মাধ্যমে গাড়ির আয়ুস্কাল বৃদ্ধি পায়। নিয়মিতভাবে গাড়ির সার্ভিসিং করানো উচিত, যা সাধারণত প্রতি ৫,০০০ কিমি বা ৬ মাস অন্তর করা উচিত। এছাড়া, জাপানি গাড়ির জন্য বিশেষায়ীত সার্ভিস সেন্টার খুঁজে বের করা উচিত, যেখানে জাপানি গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও ভালো সেবা পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন  ফেইসবুক আইডি হ্যাক হবার কারণ, ফেইসবুক আইডি নিরাপদ রাখার ৬টি উপায়

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির জন্য যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। কিছু ডিলারশিপে এক বছরের ওয়ারেন্টি প্রদান করা হয়, যা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করলে গাড়ির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো সেবা প্রদান করবে।

রিকন্ডিশন্ড জাপানি গাড়ি কেনার সময় আপনার উচিত সব বিষয় বিবেচনা করা। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আপনি ভালো মানের গাড়ি ক্রয় করতে পারবেন, যা আপনার প্রত্যাশা পূরণ করবে। গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ হওয়া উচিত যাতে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং সফলভাবে আপনার কাংক্ষিত গাড়িটি ক্রয় করতে পারেন।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top