Search
Close this search box.

সিলেটি ভাষার সম্পূর্ন ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন

sylheti-language

সিলেটি ভাষা গুগল কীবোর্ডে যুক্ত হওয়ার কেন্দ্র করে বিপুল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, চলুন জেনে নেই সিলেটি ভাষার সম্পূর্ন ইতিহাস। সিলেটি ভাষা বা সিলোটি ভাষা বাংলাদেশের সিলেট সুরমা উপত্যকা অঞ্চলে এবং ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকা ও হোজাই জেলায় প্রচলিত একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। এছাড়াও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেটি পূর্বাঞ্চলীয় হওয়ায় এবং বাংলা ভাষার প্রমিত রীতির ভিত্তি নদীয়া তথা পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক বাংলা হওয়ায়, বাংলা ভাষার মূল রীতির সাথে এর যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। ২০২০ সালে কানাডাভিত্তিক ওয়েবসাইট ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টে প্রকাশিত বিশ্বের ১০০টি কথ্য ভাষার তালিকায় স্থান পায় সিলেটি ভাষা। যেটি ১ কোটি ১৮ লাখ কথ্য ভাষাভাষী মানুষ নিয়ে পৃথিবীর ৯৭ তম বৃহৎ ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। একই তালিকায় বিশ্বে ৮৮তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা চাঁটগাঁইয়া।

সিলেটি ভাষার নাম ও বর্ণমালা

সিলেট শহরের নাম থেকে সিলেটি নামটির উৎপত্তি, যা এই অঞ্চলের উপভাষা বা ভাষাকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। গ্রিয়ারসনের (১৯০৩) মত অনুসারে, সিলেট শহরের নাম অনুসারে ইউরোপীয়রা এখানকার স্থানীয় ভাষাকে সিলেটিয়া নামে অভিহিত করত। যদিও সেই সময়ের ভাষাভাষীরা এটিকে জৈন্তিয়াপুরি, পূর্ব শ্রীহট্টীয়া বা উজানিয়া হিসেবে ডাকত।

সিলেটি ভাষা সিলেট্টি, সিলেটি বাংলা, ছিলটি, সিলোটীয়া ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

সিলেটে প্রাচীনকাল হতে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মত বাংলা লিপিতে লেখালেখি হলেও মধ্যযুগে ইসলামের আগমনের পর বাংলার পাশাপাশি সিলেটি নাগরী লিপি প্রচলিত হয়। তবে বর্তমানে নাগরী লিপি তেমন চোখে পড়ে না, লেখার জন্য এখন শুধু বাংলা বর্ণমালাই ব্যবহৃত হয়। ভারতের বিহার রাজ্যের কৈথী লিপির সঙ্গে সিলেটি নাগরী লিপির সম্পর্ক রয়েছে। 

সিলেটি নাগরী লিপিতে ৩৩টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে স্বরবর্ণ ৫টি, ব্যঞ্জনবর্ণ ২৭টি, অযোগবাহবর্ণ বা ধ্বনিনির্দেশক চিহ্ন ১টি।

সিলেটি ভাষার ইতিহাস

সিলেটি ভাষার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এ ভাষার প্রচলন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের বহু সংখ্যক লোকের মুখের ভাষা সিলটী। এটি একটি প্রাচীন ভাষা তাতে কোন সন্দেহ নেই। গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল ও অধ্যাপক মুহম্মদ আসাদ্দর আলীর মতে জটিল সংস্কৃত-প্রধান বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি হিসেবে ‘সিলটী নাগরী’ লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। গবেষকদের ধারণা, ইসলাম প্রচারক সুফী দরবেশ এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মনের ভাব বিনিময়ের সুবিধার জন্যে নাগরী লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল। 

আরও পড়ুন  তিনঘণ্টার ব্যবধান আমাদের ইদ-রোজা কেন সৌদি আরবের থেকে একদিন পরে হয়?

এই নাগরী বা সিলেটি ভাষা শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চল এবং ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাত লক্ষেরও বেশি। বৃহত্তর সিলেটের বর্তমান জনসংখ্যা এক কোটি। লন্ডনের সিলেটি রিসার্চ এন্ড ট্রেন্সলেশন সেন্টারের উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চল সহ সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষের মুখের ভাষা হচ্ছে সিলেটি।

সিলেটি ভাষার শ্রেণীবিভাগ

অমৃতা দাস সিলেটি ভাষার বৈচিত্র্যকে দুটি দলে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। পূর্ব-সিলেট পশ্চিম গ্রুপ এবং সিলেট-কাছার গ্রুপ।

সিলেট-কামরূপ অঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষার বৈচিত্র্য বা বিভিন্ন উপভাষিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন পশ্চিম সিলেটের উপভাষা, উত্তর-পূর্ব সিলেটের উপভাষা, উত্তর সিলেটের উপভাষা, শহরের উপভাষা (সিলেটিয়া/নাগরিয়া)। ময়মনসিংহের উপভাষার মতো পশ্চিমা উপভাষা।

শাহেলা হামিদ উল্লেখ্য করেন যে, প্রায়শই ভুলভাবে বলা হয় যে সমগ্র জেলার ভাষা অভিন্ন এবং শ্রীহট্টিয়া শব্দটি দিয়ে জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের উপভাষায় ভুলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top