Search
Close this search box.

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

ওভারিয়ান ক্যান্সার লক্ষণ

 

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এখন অস্বাভাবিক বা রেয়ার কোন রোগ নয়। আমরা প্রায়ই আমাদের আশেপাশে অনেক মহিলাকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখি বা শুনি। কিন্তু এর পেছনে কোন ফ্যাক্টরগুলো দায়ী বা প্রাথমিক লক্ষণ কী কী হতে পারে, এসব বিষয়ে আমরা কতটুকু জানি? ওভারি বা ডিম্বাশয় সন্তান ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্ব তৈরি করার পাশাপাশি শরীরের জন্য জরুরি ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। মেয়েদের শরীরে জরায়ু অর্থাৎ ইউটেরাসের দুই পাশে দুইটি ওভারি আছে। ওভারির যে কোনো অসুস্থতায় আপনার জীবন ঝুঁকিতে পরতে পারে। এর মাঝে সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে ওভারিয়ান ক্যান্সার। ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামে খ্যাত ওভারিয়ান ক্যান্সার সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করার জন্যই আজকের লেখা। তাহলে জেনে নিন, ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো ও প্রতিকার সম্পর্কে

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের স্টেজ

(১) স্টেজ ১- একটি বা উভয় ওভারিতে ক্যান্সার ছড়ানো

(২) স্টেজ ২- ওভারি থেকে তলপেটের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়া

(৩) স্টেজ ৩- পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়া

(৪) স্টেজ ৪- সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া।

 

ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ

এই ক্যান্সার ডিম্বাশয়কে সংক্রামিত করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পেলভিক জোনে এবং পেটে না ছড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বোঝা যায় না। ডিম্বাশয় ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ খুব সূক্ষ্ম হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায় ব্যথাহীন হয়। আর রোগের লক্ষণ প্রকাশ, শনাক্তকরণ এবং নির্ণয় করতে অনেক সময় লেগে যায়। এক নজরে দেখে নিন ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো।

 

ওভারিয়ান ক্যান্সার লক্ষণগুলো:

১) ক্ষুধামান্দ্য

ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে খাদ্য হজম প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে করে খাবার পরিপাক হয়ে তা থেকে শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। ফলে ক্ষুধামান্দ্য হয় এবং পেট ভরা ভরা লাগে সবসময়। ওভারি বা ডিম্বাশয় ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলো হঠাৎ করে ক্ষুধা বেশ কমে যাওয়া। তবে ভরপেটের অনুভূতি শুধু ডিম্বাশয় ক্যান্সার বা টিউমারের জন্যই নয়, হজমে সমস্যার জন্যও হতে পারে।

আরও পড়ুন  সাপে কাটা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা, সাপ কাটলে করণীয় কী? 

২) লোয়ার ব্যাক পেইন

ডিম্বাশয় ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক মহিলার লেবার পেইনের ব্যথার মতো ব্যথা অনুভূত হয় লোয়ার ব্যাকে। কোমরের নীচের দিকে অনেকদিন ধরে কোনো কারণ ছাড়াই একটানা চিনচিন করা ব্যথা হতে থাকলে তা ডিম্বাশয় ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

৩) ওভারিয়ান ক্যান্সার এর অন্যতম লক্ষণ হল পিরিয়ডের সমস্যা

মাসিক ছাড়াও হুটহাট করে যোনি পথে রক্তপাত হওয়া কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। কিংবা মাসিক সময়মতো না হওয়া, অস্বাভাবিক ব্লিডিংসহ পিরিয়ডের যেকোনো সমস্যা ডিম্বাশয় ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণের একটা হতে পারে। তবে অনেক সময় সিস্টের জন্যও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।

৪) কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়ারিয়া

খাদ্যাভ্যাস ঠিকঠাক আছে কিন্তু তারপরও কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য আবার কখনও ডায়রিয়ার সমস্যা হচ্ছে। ডিম্বাশয়ের টিউমার ফুলে উঠে পেট, অন্ত্র, ব্ল্যাডার বা মূত্রথলিতে চাপ দিতে থাকলে এই সমস্যাগুলো হতে পারে। তাই অনেক দিন ধরে যদি এমন হতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভুলবেন না।

 

অন্যান্য

হঠাৎ ওজন কমতে শুরু করা, ঘন ঘন প্রস্রাব, পেলভিস এরিয়ায় ঘন ঘন ব্যথা, যোনি পথের আশেপাশের চামড়ার রঙ পরিবর্তন বা র‍্যাশ দেখা দিলে কিংবা ঘন সাদাস্রাব নিঃসরণ, বেশি সময় ধরে তীব্র পেট ব্যথা এগুলোও কিন্তু ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। তাই শারীরিক অসুস্থতায় দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

 

ওভারিয়ান ক্যান্সার ঝুঁকির কারণগুলো জেনে নিন

সাধারণত যাদের কম মাসিক চক্র, মাসিক না হওয়া, মৌখিক গর্ভনিরোধক ওষুধ অর্থাৎ মুখে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পিল নেয়া হয়, একাধিক গর্ভধারণ করা এবং অল্প বয়সে গর্ভাবস্থা ইত্যাদি সমস্যা থাকে, তাদের এই রোগের সম্ভাবনা বেশি। বেশ কিছু মেডিসিন ব্যবহারের কারণে ডিম্বাণুতে টিউমার হতে পারে। যাদের প্রজনন অক্ষমতার জন্য হরমোনাল চিকিৎসা নিতে হয় তাদের ডিম্বাশয় ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকি থাকে। মেনপোজের আগে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন  ডাবের পানি নাকি স্যালাইন কোনটি বেশি উপকারী?  

 

ওভারিয়ান ক্যান্সার এর চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা সফল হবার সম্ভাবনা বেশি। এই রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন কতটুকু কার্যকর সেটা অনকোলজিস্ট বলতে পারবেন। তবে যাদের শরীরে ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশী, তারা আরো বড় একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আর তা হলো ওভারি এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণ। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেকেই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কারণ ওভারিয়ান ক্যান্সার রোধে এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব নারী সন্তানকে বুকের দুধ দেন তাদের মাঝে ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার প্রবণতা কম।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top