Search
Close this search box.

হাদীসের আলোকে কুরবানী করা কার উপর ওয়াজিব

কুরবানী ঈদ ২০২৩

কুরবানী শব্দের অর্থ “কারো নিকটবর্তী হওয়া”। ইসলামি মতে কুরবানী হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। মুসলমানদের পবিত্র আল কোরআনের তিনটি স্থানে কুরবানির উল্লেখ আছে যার একটি পশু কুরবানির ক্ষেত্রে এবং বাকি দুটি সাধারণ ভাবনার কাজ বোঝাতে যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যাা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করাকে ইসলামে কুরবানি বলে।

আমরা আজকে আলোচনা করব কুরবানী ঈদ ২০২৩ কত তারিখে, কুরবানী কর উপর ওয়াজিব এবং কুরবানীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। 

কুরবানী ঈদ ২০২৩ কত তারিখে

প্রতি বছর ঈদ-উল-আযহা উদযাপনের তারিখটি ২৮-২৯ জুন ২০২৩ এ পড়বে। তারিখটি ১৪৪৪ সালের জিলহজ্ব মাসে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব 

আলেমগণ কোরবানীর হুকুম নিয়ে মতভেদ করেছেন: কোরবানী করা কি ওয়াজিব যা পালন না করলে গুনাহ হবে; নাকি সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা বর্জন করাটা নিন্দনীয়?

কারো জন্য কোরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য কোরবানীকারীকে ধনী হওয়া শর্ত। অর্থাৎ তার নিজের খরচপাতি ও সে যাদের খরচ চালায় তাদের খরচপাতির অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানী করার অর্থ থাকা। অতএব, কোন মুসলমানের যদি মাসিক বেতন বা আয় থাকে এবং এ বেতন দিয়ে তার খরচ চলে যায়, এর অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানীর পশু কেনার অর্থ থাকে তাহলে সে ব্যক্তি কর্তৃক কোরবানী দেয়ার শরয়ি বিধান রয়েছে।

কোরবানী করার জন্য ধনী হওয়া শর্ত মর্মে দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: 

“যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে অথচ সে কোরবানী করেনি সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়”[সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৩), 

আলবানী ‘সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন] এখানে সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য ধনী হওয়া।

আরও পড়ুন  মসজিদুল হারামে ইতিকাফের নিবন্ধন শুরু

প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

 “প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কোরবানী দেয়া ওয়াজিব”[মুসনাদে আহমাদ (২০২০৭)]

কুরবানী নারীদের জন্য কি ওয়াজিব?

কুরবানীর বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোন ভেদ নেই। অতএব, কোন নারী যদি একাকী বসবাস করেন কিংবা তাঁর সন্তানদেরকে নিয়ে থাকেন তাহলে তাদেরকে কোরবানী করতে হবে।

আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (৫/৮১) এসেছে-

“কোরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। কোরবানী পুরুষদের উপর যেমন ওয়াজিব হয় তেমনি নারীদের উপরও ওয়াজিব হয়। কারণ ওয়াজিব হওয়ার দলিলগুলো নর-নারী সবাইকে সমানভাবে শামিল করে।

কুরবানীর ইতিহাস

ইসলামে কুরবানীর ইতিহাস বেশ প্রাচীন।  আল কুরআনে হাবিল এবং কাবিলের উল্লেখ পাওয়া যায়। হাবিল প্রথম মানুষ যে আল্লাহর জন্য একটি পশু কুুরবানী করেন । ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, হাবিল একটি ভেড়া এবং তার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি ছিল যে আগুন আকাশ থেকে নেমে আসবে এবং গ্রহণযোগ্য কুরবানী গ্রহণ করবে। তদনুসারে, আগুন নেমে আসে এবং হাবিলের জবেহকৃত পশুটির কুরবানী গ্রহণ করে। অন্যদিকে কাবিলের ফসল কুরবানী প্রত্যাখ্যান করে। কাবিল এই ঘটনায় ঈর্ষান্বিত হয় ও সামাজিভাবে অপমানবোধ করে কুরবানী কবুল না হওয়ার বিষয়টি তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে, যা মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত। কাবিল তার কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হওয়ায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেননি। 

নোট: অনেকেই মনে করেন ইব্রাহীম (আ:) এর কুরবানী করার সময় থেকেই কুরবানী এর যাত্রা শুরু হয়, আসলে তা নয়। উপরিউক্ত ঘটনা ইব্রাহীম (আ:) এর সময়ের আরও আগের ঘটনা।

কুরবানীর ফযীলত

কুরবানী হলো ইসলামের একটি শি’য়ার বা মহান আল্লাহর নির্দেশ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন:

আরও পড়ুন  ইসলামের বিধান মতে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।’ [সূরা আল-কাউসার : ২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। [মুসনাদ আহমাদ, ইবন মাজাহ- ৩১২৩]

যারা কুরবানী পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীস একটি সতর্কবাণী।

কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জিত হয়। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত,পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্ম পরায়ণদেরকে।” [সূরা আল-হাজ্জ: ৩৭]

কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি। তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থা এগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো আর যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন সেগুলো হতে খাও। আর আহার করাও ধৈর্য্যশীল অভাবী ও ভিক্ষাকারী অভাবগ্রস্তকে এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”[সূরা হজ্জ ৩৬নং আয়াত]

এ আয়াতে কুরবানীর ফযিলত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং কুরবানীর পশুকে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top