টেলিগ্রামের অজানা ৮টি টিপস
টেলিগ্রাম একটি মেসেজিং অ্যাপ। এর প্রতিষ্ঠাতাগণ হলেন নিকোলাই দুরোভ ,পাভেল দুরোভ রাশিয়ান দুই ভাই। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মার্চ, ২০১৩ সালে। টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহারকারীরা টেলিগ্রামের মাধ্যমে ছবি, স্টিকার , ভিডিও, অডিও, বার্তাসহ যেকোনো ধরনের নথি পাঠাতে পারে। এটি ব্যবহার করাও সহজ, হোয়াটসঅ্যাপ এর মতোই । অবশ্য ব্যবহারের দিক থেকে এটিকে হোয়াটসঅ্যাপ এর চেয়েও বেশি “কার্যকর” এবং “নিরাপদ” বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ।
১. মেসেজ সেভ করে রাখা
টেলিগ্রামে সেভ মেসেজ একটি সেকশন রয়েছে এখানে আপনি যেকোন মেসেজ সেভ করে রাখতে পারবেন। সাইডবার কিংবা চ্যাট লিস্ট থেকে সেভ মেসেজ একসেস করা যায়। এছাড়া কোন মেসেজ সরাসরি এখানে ফরোয়ার্ড করে রাখা যায়। যা পরবর্তীতে আপনি দেখতে পারবেন।
২. চ্যানেলে স্পেসিফিক পোস্টে কমেন্ট বন্ধ রাখা
কমেন্ট চালু করা থাকলে যখনই চ্যানেলে কোন পোস্ট করা হবে, অটোমেটিকলি তা চ্যানেল এডিট সেকশনে ডিসকাশনের জন্য লিঙ্ককৃত গ্রূপ পোস্ট হবে। কোন স্পেসিফিক পোস্টে কমেন্ট বন্ধ করে দেয়ার জন্য সিমপ্লি গ্রূপ থেকে সে পোস্টটি মুছে দিতে হবে। এতে চ্যানেলে পোস্টটি থেকে যাবে, কিন্তু Leave a comment অপশনটি থাকবে না।
৩. পাবলিক চ্যানেল ও গ্রুপ
টেলিগ্রাম গ্রূপ কিছুটা মেসেঞ্জার গ্রূপের মত, তবে তার তুলনায় অনেক বেশি ফিচারসম্পন্ন ও এডভান্সড। এখানে সর্বোচ্চ ২ লাখ জন যুক্ত থাকতে পারে। অন্যদিকে টেলিগ্রাম চ্যানেল কিছুটা ফেসবুক পেজ বা আইডির মত ব্যবহারযোগ্য, আরো ব্যবহার রয়েছে। চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যার কোন লিমিট নেই। গ্রূপ এবং চ্যানেল পাবলিক অথবা প্রাইভেট হতে পারে এবং ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপাবিলিটিসম্পন্ন একাধিক এডমিন থাকতে পারে।
৪. ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার ও ফাইল শেয়ারিং
টেলিগ্রাম সর্বোচ্চ ২ জিবি সাইজের আনলিমিটেড ফাইল আপলোডের সুযোগ দেয়, যা অন্য যেকোন জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিসের তুলনায় অনেক বেশি। এবং টেলিগ্রামে আপলোডকৃত ফাইলগুলো খুব সহজে ডাউনলোডও করা যায়।
তাই Saved Messages-এ বা প্রাইভেট চ্যানেল তৈরি করে আপনি কোন ফাইলের ব্যাকআপ নিয়ে রাখতে পারেন অথবা প্রাইভেট চ্যাট, গ্রূপ বা চ্যানেলে ফাইলগুলো অন্যদের সাথে শেয়ারও করতে পারেন।
ভালো ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ডিভাইস টু ডিভাইস ফাইল ট্রান্সফারের জন্যও টেলিগ্রাম একটা ভালো মাধ্যম। যেমন আমার ফোন থেকে পিসি কিংবা পিসি থেকে ফোনে কিছু শেয়ার করতে হলে সিম্পলি এক ডিভাইস থেকে টেলিগ্রামে আপলোড করে অন্য ডিভাইসে ডাউনলোড করে নিই!
আরেকটা কথা, যেটা সবার জন্য প্রযোজ্য না হলেও কারো কারো জন্য উপকারী হতে পারে। টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম ভার্সনে ৪ জিবি পর্যন্ত ফাইল আপলোড করা যায়। যদি আপনার কিছু বড় সাইজের ফাইল ব্যাকআপ রাখার প্রয়োজন হয়, আপনি কিন্তু ৩.৯৯ ডলারে ১ মাসের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ক্রয় করে সেগুলো ব্যাকআপ নিয়ে রাখতে পারেন। মাস শেষে সাবস্ক্রিপশন না থাকলেও ফাইলগুলো থেকে যাবে।
ডেস্কটপ ভার্সনে সাইডবার এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে হোমপেজের পেনসিল আইকন থেকে গ্রূপ অথবা চ্যানেল তৈরি করা যায়।
৫. ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করা
টেলিগ্রাম ব্যবহার করতে স্মার্টফোন বা পিসিতে অ্যাপ ইন্সটল করা কিন্তু আবশ্যক না। আপনি চাইলে ওয়েব ভার্শনেও টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যাবহার করতে পারবেন। এমনকি একটি নয়, টেলিগ্রামের সর্বমোট দুটি ওয়েব ভার্সন আছে ইন্টারফেসে একটুখানি তফাৎসহ। web.telegram.org/k এবং web.telegram.org/z থেকে এগুলো এক্সেসযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে এর লিগ্যাসি সংস্করণ।
টেলিগ্রামে কমেন্ট ও রিয়েকশন সুবিধা যোগ:
৬. চ্যানেলে কমেন্ট ও রিয়েকশন সুবিধা যোগ করা
আপনি চাইলে আপনার চ্যানেল এর রিয়াকশন ও কমেন্ট সুবিধা যোগ করতে পারেন। টেলিগ্রামের মোবাইল সংস্করণে চ্যানেলে যেয়ে চ্যানেলের নামে ক্লিক করে সেখান থেকে ওপরের দিকে পেনসিল আইকনে ক্লিক করলে এডিট অপশন আসবে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা চ্যানেলের নামে ক্লিক করে থ্রি ডট আইকনে ক্লিক করে মেসেজ চ্যানেল অপশনে যেতে হবে।
এখানে রিয়াকশন একটি অপশন আছে, যেখান থেকে বিভিন্ন রিয়েকশন এনাবল বা ডিজেবল করতে পারবেন। বলে রাখা ভালো , লেখার সময়ে টেলিগ্রামের মোট ২৯টি রিয়েকশনের মধ্যে শেষের ১৩টি প্রিমিয়াম ফিচার, এনাবল রাখা হলেও তা শুধু প্রিমিয়াম ব্যবহাকারীরা ব্যবহার করতে পারবেন।
কমেন্ট চালু করার জন্য ডিসকাশন এ যেতে হবে। এখানে একটি টেলিগ্রাম গ্রূপের সাথে চ্যানেলটি অন্য আরেকটি গ্রূপের যোগ থাকতে হবে। তবে গ্রূপটি পূর্বে থেকে তৈরি করা থাকলেও হবে, অথবা নতুন করেও তৈরি করা যাবে।
চ্যানেলে ডিসকাশন ও রিয়েকশন চালু করার পর পোস্টগুলোর সাথে লিভ এ কমেন্ট অপশন ও রিয়েক্ট অপশন দেখা যাবে। ডেস্কটপ ভার্সনে মেসেজের ওপর কার্সর ধরলে এবং অ্যান্ড্রয়েডে মেসেজে ট্যাপ করলে রিয়েকশন বাটনগুলো পাওয়া যাবে। এখান থেকে আপনি আপনার ইচ্ছামত রিয়াকশন এবং কমেন্ট অন বা অফ করতে পারবেন।
৭. ভিডিও কনফারেন্সিং
টেলিগ্রাম গ্রূপ বা চ্যানেলে ভিডিও চ্যাট/লাইভ স্ট্রিম করার সুযোগ আছে, যা কিছুটা জুম কিংবা গুগল মিটের মত কাজ করে। এখানে সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ হলো ৪০ মিনিট বা ১ ঘন্টা এমন কোন লিমিট নেই, আনলিমিটেড জন অংশ নিতে পারে। তবে সম্ভবত একসাথে সর্বোচ্চ ৩০ জন তাদের ভিডিও চালু রাখতে পারার একটি লিমিট আছে।
একজন একইসাথে স্ক্রিন শেয়ার ও ক্যামেরা ভিডিও চালু রাখতে পারেন। OBS Studio বা তৃতীয় পক্ষের সার্ভিসের সাথে ব্যবহারের সুযোগ আছে। ইন অ্যাপ রেকর্ডিং সুবিধাও আছে। সবমিলিয়ে টেলিগ্রামের ভিডিও কনফারেন্সিং ফিচারটি বেশ পাওয়ারফুল।
চ্যানেলে Manage video chats/Manage live streams রাইটসহ এডমিনরা ভিডিও চ্যাট শুরু করতে পারবেন। ডেস্কটপ ভার্সনে হেডারে মেসেজ আইকন থেকে তা শুরু করা যাবে। অ্যান্ড্রয়েডে চ্যানেলে হেডার থেকে নামে ক্লিক করে পরবর্তী স্ক্রিনে আইকন থেকে ভিডিও চ্যাট/লাইভ স্ট্রিম সূচনার অপশন পাবেন।
এছাড়া পার্সোনাল মেসেজিংয়ে অডিও ও ভিডিও কলিং সুবিধা তো রয়েছেই।
৮. হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা
কনভার্সেশন/চ্যানেলের মেসেজগুলো বিন্যস্ত রাখতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার একটা কার্যকর পদ্ধতি। হ্যাশট্যাগ অনেকটা ক্যাটাগরাইজ করার মত ব্যবহার করা যায়। কোন পোস্ট থেকে হ্যাশট্যাগে ক্লিক করলে বা সার্চ করলে সে হ্যাশট্যাগযুক্ত পোস্টগুলো দেখা যাবে। বিষয়ভিত্তিক পোস্টগুলোতে যথাযথ হ্যাশট্যাগ যুক্ত করে এরপর হ্যাশট্যাগগুলো সহজে পাওয়ার জন্য ডেসক্রিপশনে যুক্ত করা যেতে পারে অথবা কোন পোস্টে যুক্ত করে পোস্টটি পিন করে রাখা যেতে পারে।