মানিকগঞ্জ বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি জেলা। এটি ঢাকা বিভাগের একটি অংশ, ১৮৪৫ সালে এটি প্রথমে একটি মহকুমা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এটি প্রথমে ফরিদপুর জেলার অধীনে ছিল, তারপর প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ সালে এটি ঢাকা জেলার অধীনে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে মানিকগঞ্জকে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ব্যাক্তি হলেন মুনীর চৌধুরী, কানিজ ফাতেমা রোকসানা, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, তারেক মাসুদ, রফিক উদ্দিন আহমেদ ইত্যাদি।
মানিকগঞ্জ জেলার ১০টি দর্শনীয় স্থান
১. বালিয়াটি জমিদারবাড়ি
২. মাচাইন মসজিদ
৩. রামকৃষ্ণ মিশন
৪. গৌরাঙ্গ মঠ
৫. ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
৬. তেওতা জমিদারবাড়ি
৭. মাট্টা মঠ
৮. শ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ি
৯. মানিকগঞ্জের হাজারীগুর
১০. নারায়ণ সাধুর আশ্রম
মানিকগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
১. বালিয়াটি জমিদারবাড়ি
বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি জেলার সাটুরিয়ায়। বালিয়াটির জমিদাররা আঠারো শতকের প্রথমার্ধ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত প্রায় দুইশত বছর ধরে এই বাড়িসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করেন। যিনি লবণের ব্যবসা করতেন। তার উত্তরসূরিরা পরবর্তীতে এখানে একে একে আরো কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করেন। এখানে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত বাড়িগুলো পূর্ববাড়ি, পশ্চিমবাড়ি, উত্তরবাড়ি, মধ্যবাড়ি ও গোলাবাড়ি নামে পরিচিত ছিল।
২. মাচাইন মসজিদ
মাচাইন মসজিদ সুলতানি আমলের একটি উদাহরণ। মাচাইন গ্রামের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। কথিত আছে, শাহ রুস্তম নামে এক সাধক এখানে বাঁশের মাচায় ধ্যান করতেন। মসজিদের পাশেই তার কবর।
৩. রামকৃষ্ণ মিশন
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির পাশেই স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশন। ১৯১০ সালে, বালিয়াটিতে শ্রী রাধিকাচরণ চৌধুরী রামকৃষ্ণ মিশন দেবাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। মাজারটিতে একটি মাজার এবং একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। এটি ভারতের কেন্দ্রীয় রামকৃষ্ণ মিশন দ্বারা স্বীকৃত বাংলাদেশের দশটি মিশনের মধ্যে একটি।
৪. গৌরাঙ্গ মঠ
রামকৃষ্ণ মিশনের সামনেই বিখ্যাত গৌরাঙ্গ মঠ। স্থানীয় জমিদার মনমোহন রায় চৌধুরী ১৯২৫ সালে তার স্ত্রী ইন্দুবালা এবং কন্যা সুনীতিবালার স্মরণে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, ভারতের বিখ্যাত গদাই গৌরাঙ্গ মঠের মূর্তিটি আর মন্দিরে নেই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদাররা পাথরের মূর্তিটি ধ্বংস করে দেয়।
৫. ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
বালিয়াটি জমিদারবাড়ির কাছেই ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। জমিদার ঈশ্বর চন্দ্র রায়ের নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্রের পুত্র হরেন্দ্র কুমার রায়চৌধুরী ১৯১৫-১৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের কংক্রিটের ভবনটি তৈরি করতে সে সময় প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করেন হরেন্দ্র কুমার।
৬. তেওতা জমিদারবাড়ি
মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এই প্রাচীন জমিদার বাড়ির দুই ভাই হেম শংকর রায়চৌধুরী ও জয়শঙ্কর রায়চৌধুরী এই সুন্দর বাড়ি থেকেই জমিদারি পরিচালনা করতেন। বর্তমানে বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাড়ির ৫৫টি ঘর কোনো না কোনোভাবে এখানে টিকে আছে। জমিদারবাড়ি প্রাঙ্গণে একটি নবরত্ন মন্দির রয়েছে। মন্দিরের অবস্থাও জরাজীর্ণ।
৭. মাট্টা মঠ
মাট্টা মঠ জেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে মাট্টা গ্রামে অবস্থিত। তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার রামকৃষ্ণ সেন ও প্রসন্ন কুমার সেন মঠটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
৮. শ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ি
মানিকগঞ্জে অবস্থিত শ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ি 1895-96 সালে নির্মিত হয়েছিল। প্রতি বছর রথ উপলক্ষে এখানে লোক মেলা বসে। এছাড়া নিয়মিত ধর্মসভা, নামকীর্তন, যাত্রাপালাসহ নানা অনুষ্ঠান হয়।
৯. মানিকগঞ্জের হাজারীগুর
মানিকগঞ্জ হাজারীগুরের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা গ্রামের মিনহাজ উদ্দিন হাজারীর উদ্ভাবিত সাদারঙের এই খেজুরের গুড়ের স্বাদ অতুলনীয়। হাজারী গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন মিনহাজ উদ্দিন হাজারী পরিবার ও গ্রামের বেশ কয়েকজন কারিগর।
১০. নারায়ণ সাধুর আশ্রম
ঝিটকা গ্রামের আরেকটি প্রাচীনত্ব হল নারায়ণ সাধুর আশ্রম। নারায়ণ নামে এক সাধু উড়িষ্যা থেকে একটি বড় পাথরের টুকরো এনে এখানে স্থাপন করেন। আশ্রমটি ১৩৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।