রংপুর জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
রংপুর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা। এটি রংপুর বিভাগের একটি অংশ। রংপুর জেলার উত্তরে নীলফামারী জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম এবং পশ্চিমে দিনাজপুর অবস্থিত। ১৫৭৫ সালে মুঘল সম্রাট রাজা মান সিং এবং আকবরের সেনাপতি রংপুর জয় করে, কিন্তু ১৬৮৬ সাল পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণরূপে মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত হয়। স্থানের নাম যেমন মুঘলবাসা (‘মুঘল এলাকা’) এবং মুঘলহাট (‘মুঘল বাজার’) রংপুর এবং এর পশ্চিমাঞ্চলের মুঘল সমিতি এবং অতীতের সাক্ষ্য বহন করে। পরে রংপুর ঘোড়াঘাটের “সরকার” এর নিয়ন্ত্রণে চলে যায় । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর রংপুর জেলাকে পাঁচটি জেলায় ভাগ করা হয়। বাংলাদেশ বেতার রংপুর (বিবিআর) এর রংপুরে একটি সম্প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। রংপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) একটি স্যাটেলাইট স্টেশন রয়েছে।
রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ:
১. তাজহাট প্রাসাদ
২. টাউন হল
৩. কেল্লাবন্দ মশিদ
৪. রংপুর চিড়িয়াখানা
৫. কেরামতিয়া মসজিদ
৬. ভিন্ন জগৎ
৭. ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি
৮. মন্থনা জমিদার বাড়ি
৯. চিকলি ভাটা
১০. লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ
রংপুর জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ১০টি পর্যটন স্থান:
১. তাজহাট প্রাসাদ
তাজহাট প্রাসাদ আগে জমিদার বাড়ি ছিল কিন্তু এখন এটি তাদের জিনিসপত্র সহ একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে যা তারা ব্যবহার করেছে। জমিদারদের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে এই জাদুঘরটিতে আসতে পারেন। এছাড়াও ভবনটির স্থাপত্য চিত্তাকর্ষক পাশাপাশি সেই যুগে এই ধরণের নির্মাণ জটিল ছিল। তাই দর্শনার্থীদের জন্য এটি অবশ্যই একটি দর্শনীয় স্থান।
২. টাউন হল
টাউন হলটি রংপুর শহরে অবস্থিত। এখানে সকল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি একটি লাল রঙের হল যার উপর একটি ঐতিহ্যগত স্পর্শ রয়েছে। এই টাউন হল অনেক কিংবদন্তি শিল্পীদের এখানে অভিনয় করতে দেখেছে। রংপুর টাউন হল হলো রংপুরের সমগ্র সামাজিক ও রাজনৈতিক মহড়ার চিরাচরিত স্থান।
৩. কেল্লাবন্দ মসজিদ
রংপুর থেকে দিনাজপুর মহাসড়কের পথে এই মসজিদটি অবস্থিত। মুঘল সাম্রাজ্যের সময় এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কয়েক দশক ধরে মসজিদটি সক্রিয়ভাবে নিজেকে ধরে রেখেছে। তিন ভল্টের এই মসজিদটি প্রায় বহু বছরের পুরনো। মসজিদের পাশে একটি শক্ত কূপ ও একটি প্রাচীন সমাধিস্থল রয়েছে।
৪. রংপুর চিড়িয়াখানা
চিড়িয়াখানাটি শহরের মাঝখানে অবস্থিত। এটি উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা ১৯৯১ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এবং স্থানীয় একজন লোকের জমিতে এই চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। চিড়িয়াখানার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকরা স্থানটিকে ভ্রমণ করেন।
৫. কেরামতিয়া মসজিদ
কেরামতিয়া মসজিদের কাঠামো পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ। প্রতি বছর অনেক পর্যটক তাদের চোখ খুশি করতে মসজিদে যান। মুঘলরা মসজিদের নকশার ভাষা নির্ধারণ করেছে। এটি রংপুর জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
৬. ভিন্ন জগৎ
ভিন্ন জগৎ রংপুর জেলার একটি বিনোদন পার্ক। এটি শহরের মানুষের জন্য একটি রিফ্রেশমেন্ট পয়েন্ট। প্রতি সপ্তাহান্তে জায়গাটি মানুষের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। মানুষ এখানে আসে বিনোদন করতে। আর এটিই রংপুরের একমাত্র বিনোদন পার্ক।
৭. ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়িটি রংপুর সদরে অবস্থিত। এটি রংপুরের অন্যতম নিদর্শন। রংপুরে মোট ৮টি ল্যান্ডমার্ক রয়েছে। জমিদার বাড়িটি দেখতে অসাধারণ ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে আজকে ধ্বংস প্রায় অবস্থায়। ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়। স্বত্বাধিকারী রাজারাইয়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান শিবচন্দ্র ইটাখুলা জমিদার বাড়ির তৈরি করে ছিলেন।
৮. মন্থনা জমিদার বাড়ি
মন্থনা জমিদার বাড়ি পীরগাছায় অবস্থিত। রংপুরে যেমন জানা গেছে এখানে মুঘল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল তাই রংপুরে অনেক জমিদার বসবাস করতেন। সে জন্য মন্থনা নামে আরেকটি জমিদার বাড়ি রয়েছে। এটিও রংপুরের অন্যতম নিদর্শন। কিন্তু প্রতিটি জমিদার বাড়ীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে অপরের থেকে আলাদা করে তোলে।
৯. চিকলি ভাটা
চিকলি ভাটা রংপুর সদরে অবস্থিত। এটি রংপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। একটি বিশাল কৃত্রিম হ্রদ যা গাছপালা এবং অনেক প্রাণীর সমাগমে ঘেরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সতেজ বাতাস প্রধান আকর্ষণ। এটি রংপুর বিভাগের সুপরিচিত জায়গা যদিও পর্যটন আকর্ষণ নয় তবে এটি পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার আকর্ষণ হতে পারে।
১০. লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ
লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ রংপুরের একটি দর্শনীয় স্থান। ঐতিহাসিক লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের লালদীঘি এলাকায় অবস্থিত। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়। পরে বাসিন্দারা মসজিদটি পরিষ্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলেন। মসজিদে কোনো শিলালিপি না থাকায় লালদীঘি মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।