ফেনী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। এটি বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং ত্রিপুরার একটি অংশ ছিল। জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র ফেনী শহরে যা জেলার কেন্দ্রীয় অংশে ফেনী সদর উপজেলার সদর দপ্তর হিসেবেও কাজ করে। জেলার আসল নাম ছিল শমশেরনগর। জেলাটি ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত সোনাগাজী, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভূঁইয়া, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর ।
ফেনী নদী থেকে ফেনী নামটি এসেছে। ফেনী নামটি ১৬ শতকের কবিদের সাহিত্যকর্মে নদীর স্রোত এবং ফেরি পারাপারের ঘাট হিসাবে পাওয়া যায়। পরাগলপুরের বর্ণনায় কবীন্দ্র পরমেশ্বর শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ১৭ শতকে মির্জা নাথান লেখা ফার্সি বই ” বাহারিস্তান-ই-গাইবি “-এ “ফেনী” শব্দটি “ফেনী” হয়ে যায়।। জনসংখ্যার দিক থেকে যেমন ফেনী জেলা ২য় তেমনি এর পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মূলত ফেনী জেলায় অবস্থিত কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যেখান থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পায় সরকার।
ফেনী জেলার পর্যটন স্থান:
১. গোল্ডেন শিশু পার্ক
২. চৌধুরী বাড়ি মসজিদ
৩. সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প
৪. শমসের গাজীর দিঘী
৫. নিহাল পল্লী
৬. বিজয় সিং দিঘী
৭. পাগলা মিয়ার মাজার
৮. সাত মন্দির
৯. চাঁদ খান মসজিদ
১০. ফেনী নারকেল বাগান
ফেনীর ১০টি দর্শনীয় স্থান
১. গোল্ডেন শিশু পার্ক
ফেনীর অন্যতম জনপ্রিয় স্থান গোল্ডেন শিশু পার্ক। এটি বাংলাদেশের ফেনীতে বিজয় সিং দীঘির পশ্চিম পাশে মহিপালে অবস্থিত। এটি সকাল ৯টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এটি ফেনীর একটি বিনোদন পার্ক। বাচ্চারা এই জায়গায় যেতে খুব পছন্দ করে। এই পার্কে অনেক সুন্দর রাইড আছে। কেউ কেউ হাঁটতে ও ছবি তোলার জন্য এই পার্কে যান।
২. চৌধুরী বাড়ি মসজিদ
চৌধুরী বাড়ি মসজিদ রামনগর, দাগনভূঁইয়া, ফেনীতে অবস্থিত। এটি একটি দুইশত ষাট বছরের পুরনো মসজিদ। মানুষ মুঘল স্থাপত্যের মুক্তি প্রকাশ করতে আসে। চমৎকার মসজিদটি জামিদার বদিউন্নেছা চৌধুরানী নির্মাণ করেছিলেন।
৩. সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প
সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্পটি সোনাগাজী ফেনীতে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্প। ফেনী সদর, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, পোরশুরামে পানি সরবরাহের জন্য ৪০ ফুট স্লইস গেট তৈরি করা হয়েছে। এটি কিছু সীমিত এলাকায় জল সরবরাহ করে। পর্যটকরা এই জায়গায় হ্রদের একটি বহিরাগত দৃশ্য দেখতে পারেন।
৪. শমসের গাজীর দিঘী
শমসের গাজী দীঘি পরশুরাম, ফেনীতে অবস্থিত। এই দীঘিটি ফেনীর অন্যতম অসামান্য দীঘি। পর্যটকদের কাছে জায়গাটি খুব ভালো লাগে। এটি একটি ঐতিহাসিক দীঘি। এই জায়গায় মানুষ প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারে। এই দীঘির পাশে রয়েছে অপূর্ব দৃশ্য।
৫. নিহাল পল্লী
নিহাল পল্লী ফেনীর একটি বিখ্যাত স্থান। পর্যটকরা এখানে আশেপাশের পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন। বেশির ভাগ মানুষ বিকেলে আসে। নিহাল পল্লী সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এর কোনো দিন ছুটি নেই। এটি একটি পারিবারিক ভ্রমণ স্থান। এর প্রকৃতি অত্যন্ত সুন্দর। রিফ্রেশমেন্টের জন্য পরিবার এবং বন্ধুরা এখানে আসতে পারেন।
৬. বিজয় সিং দিঘী
বিজয় সিং দীঘি একটি ঐতিহ্যবাহী লেক। এটি ফেনী জেলায় অবস্থিত। অন্যান্য হ্রদের মধ্যে এটি এখানে সবচেয়ে বড় হ্রদ। এটি মহান রাজা বিজয় সেনের একটি অবিনাশী কাজ। লেকটি ফেনী শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে বিজয় সিং গ্রামে অবস্থিত। বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন এই অপূর্ব লেকটি দেখতে।
৭. পাগলা মিয়ার মাজার
ফেনী বাংলাদেশের একটি সুন্দর ছোট জেলা এবং এর মূল শহর থেকে ঘুরে দেখার জন্য কয়েকটি জিনিস রয়েছে। ফেনীতে থাকার সময় যারা সময় পান তারা পাগলা মিয়ার মাজারে যান। এটি পাগলা মিয়ার মাজার নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম ছিল সাইয়্যাদ আমির উদ্দিন। এই মাজারে অনেক মানুষ আসেন। এই মাজার ছাড়াও আরও অনেক মজার রয়েছে। পর্যটকরা সেখান থেকে অনেক সুন্দর ও অনন্য জিনিস কিনতে পছন্দ করেন।
৮. সাত মন্দির
জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বাঁশপাড়া গ্রামে এক জায়গায় সাতটি মঠ আকৃতির স্থাপনা সাত মন্দির বা সাতবাড়ি নামে পরিচিত। এগুলো আসলে হিন্দু জমিদারদের সমাধি বা মঠ। এখানে অবশ্য এটি একমন্দির নামে পরিচিত। ফেনী সদর থেকে বাসে বা বেবি ট্যাক্সিতে করে ছাগলনাইয়া বাজারে আসতে হবে এবং সেখান থেকে রিকশায় করে সাত মন্দিরে আসতে হবে।
৯. চাঁদ খান মসজিদ
জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলা সদর সংলগ্ন চাঁদ গাজী বাজারের কাছে এই প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। ইটের শুরকির তৈরি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের দেয়াল বেশ চওড়া। মসজিদের সামনের কালো পাথরের নামফলক থেকে জানা যায় চাঁদ গাজী নামে এক ব্যক্তি ১১১২ হিজরিতে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
১০. ফেনী নারকেল বাগান
ফেনী জেলার নারকেল বাগান অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসে এই নারকেল বাগান দেখতে। এটি ফেনী জেলা থেকে কিছু মাইল দূরে হওয়াতে খুব সহজেই যাওয়া যায়।