আহসান মঞ্জিল ঢাকার নবাবের পূর্ববর্তী সরকারি আবাসিক প্রাসাদ এবং আসন। আহসান মঞ্জিল ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারতলীতে অবস্থিত । ১৮৫৯ সালে নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হয় । বর্তমানে আহসান মঞ্জিল একটি জাতীয় জাদুঘর হিসাবে মনোনীত হয়েছে । ১৯৫২ সালে ইস্ট বেঙ্গল এস্টেট অধিগ্রহণ আইনের অধীনে ঢাকা নবাব রাজ্য অধিগ্রহণ করা হয়। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে নবাবদের উত্তরসূরিদের পক্ষে প্রাসাদটি রক্ষণাবেক্ষণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। জমিদারি অধিগ্রহণের পর পরই নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ পরীবাগ গ্রিন হাউসে বসবাস শুরু করেন। প্রাসাদটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল কারণ উত্তরসূরিরা এর মর্যাদা বিবেচনা না করে কক্ষ ভাড়া দিয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে অবৈধ দখলদাররা জায়গাটিকে নোংরা বস্তিতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নবাব পরিবারের অধিকাংশই উন্নত জীবিকা ও কাজের সন্ধানে বিদেশে চলে যান।
আহসান মঞ্জিলে কি কি আছে
বর্তমানে আহসান মঞ্জিলে দেখার মত কিছু নেই । তবে যেহেতু আহসান মঞ্জিল বর্তমানে একটি জাতীয় জাদুঘর তাই আপনি সেখানে সংরক্ষিত বাংলার নবাবদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, আসবাপত্র, বিভিন্ন চুক্তিপত্র ইত্যাদি দেখতে পাবেন। এছাড়াও প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ৫ মিটার উচ্চতার বারান্দা রয়েছে। ভবনটির সামনের দিকে প্রশস্ত বুড়িগঙ্গা নদী রয়েছে, নদীর ধারে, একটি খোলা প্রশস্ত সিঁড়ি সরাসরি দ্বিতীয় পোর্টাল পর্যন্ত নিয়ে যায় এবং তাদের স্ট্যান্ডে বিশাল ত্রিখিলানযুক্ত পোর্টাল রয়েছে । সিঁড়ির সামনে বাগানে একসময় একটি ফোয়ারা ছিল যা আজ নেই। বিল্ডিংয়ের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশের সমস্ত প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে যার মাঝখানে একটি খোলা বারান্দা রয়েছে।
প্রাসাদ আহসান মঞ্জিল দুটি ভাগে বিভক্ত পূর্ব দিকে এবং পশ্চিম দিকে। গম্বুজ বিশিষ্ট পূর্ব দিকের ভবনটিকে বলা হয় রংমহল এবং পশ্চিম দিকের বসার ঘরকে বলা হয় অন্দরমহল। উচ্চ অষ্টভুজাকার গম্বুজটি কেন্দ্রীয় গোলাকার কক্ষের উপর স্থাপন করা হয়েছে। প্রাসাদের পূর্ব দিকে একটি বড় ড্রয়িং রুম, কার্ড রুম, লাইব্রেরি, স্টেট রুম এবং আরও দুটি অতিথি কক্ষ রয়েছে। বলরুম, হিন্দুস্তানি কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। একটি সুন্দর খিলানযুক্ত কৃত্রিম ছাদ, কাঠের তৈরি, ড্রয়িংরুম এবং জলসাঘরকে সাজিয়েছে।
পশ্চিম অংশে একটি চমৎকার ডাইনিং হল এবং কয়েকটি ছোট কক্ষ রয়েছে। ডাইনিং ও দরবার হলের মেঝে সাদা, সবুজ ও হলুদ রঙের সিরামিক টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিখ্যাত স্টোর রুম, যেখানে নবাবদের মূল্যবান জিনিসপত্র রাখা হত, নিচতলার পশ্চিম অর্ধে অবস্থিত পাঁচটি কক্ষের মাঝখানে ছিল। সেই কক্ষগুলির সাথে একটি দরবার হল বা সমাবেশ হল এবং একটি বক্ষ কক্ষও রয়েছে সেখানে।
আহসান মঞ্জিলে কেন যাবেন
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটি কথা বলতে চাই আপনি কি বাংলার নবাবদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চান ? আহসান মঞ্জিল বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় জাদুঘর। সেখানে হয়তো আপনি তেমন কিছু দেখতে পাবেন না। কিন্তু যারা ইতিহাস প্রেমী তারা অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। বাংলার নবাবদের সুপ্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আহসান মঞ্জিল জাতীয় জাদুঘরে আসতে হবে। এছাড়াও শিক্ষা সফরের জন্য আহসান মঞ্জিল উপযুক্ত স্থান।
ছাত্র ছাত্রীরা যেখানে মুখস্ত বিদ্যার দিকে ঝুঁকছে সেখানে যদি তাদের উপস্থিত জ্ঞান বাড়ানো যায় তাহলে তার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বিভিন্ন সময় ঐতিহাসিক স্থান গুলো সফর করে সেই স্থান সম্পর্কে জানা। সেই দিক থেকে বাংলার নবাবদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আহসান মঞ্জিলে আসতে হবে।
আহসান মঞ্জিলে কিভাবে যাবেন
তার আগে জানতে হবে আহসান মঞ্জিল কোথায় অবস্থিত ? আহসান মঞ্জিল ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারতলীতে অবস্থিত। ঢাকার সদরঘাটগামী যে কোন বাসে উঠে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির কাছে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় আহসান মঞ্জিল যেতে পারবেন। অথবা ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত এসে রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে সদরঘাট হয়ে আহসান মঞ্জিল দেখতে যেতে পারেন। অথবা গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবুবাজার ব্রিজের আগে নেমে রিক্সায় আহসান মঞ্জিল যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে সিএনজিতে করে সরাসরি চলে আসতে পারবেন আহসান মঞ্জিল।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর অনলাইন টিকিট
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের জন্য অনলাইনে কিভাবে টিকিট কাটতে হয়:
টিকিট ক্রয় নিয়মাবলী:
– ওয়েবসাইট (ক্লিক) Buy Ticket ডায়গল বক্সে আপনার যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেজেস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। রেজিস্ট্রেশন একবারই করতে হবে। পরবর্তীতে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে বার বার Login করে টিকেট ক্রয় করতে পারবেন।
– Purchase eTicket অপশনে ক্লিক করুন। জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ,টিকিট সংখ্যা লিখে Add বাটনে ক্লিক করুন।
– একের অধিক টিকেট কিনতে Add More Ticket বাটনে ক্লিক করুন।
– Make Payment বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
– Print Ticket অপশনে ক্লিক করে আপনার টিকিট প্রিন্ট করতে পারেন।
– Ticket checking জাদুঘরে প্রবেশের সময় অনলাইন টিকিটের প্রিন্ট কপি অথবা মোবাইলে ডাউনলোড কপি অথবা টিকিট নম্বর প্রদর্শন করুন
আহসান মঞ্জিল টিকিট মূল্য:
আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট মুল্যের টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়। ভ্রমণ গাইড অনুসারে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ১০ টাকা, প্রাপ্ত বয়স্কদের জনপ্রতি টিকেট মূল্য ২০ টাকা। তবে বিদেশী পর্যটকদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ৫০০ টাকা। তবে প্রতিবন্ধীদের আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয়ে না।