ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের একটি জেলা যা চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত । ভৌগোলিকভাবে, এটি বেশিরভাগই কৃষিজমি এবং স্থানগতভাবে গাঙ্গেয় সমভূমির অংশ । এর উত্তরে কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা , পশ্চিমে নরসিংদী জেলা ও নারায়ণগঞ্জ , দক্ষিণে কুমিল্লা এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। বাংলার ষোড়শ শতাব্দীর বারো-ভুঁইয়া বিদ্রোহী সর্দারদের নেতা ঈসা খানের রাজধানী ছিল সরাইলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ২০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিখ্যাত ব্যাক্তি বর্গ হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, আলমগীর , সৈয়দ আব্দুল হাদী প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান
কালভৈরবমূর্তি
কালভৈরব সদরের মেড্ডায় রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান। এখানে একটি মন্দিরের ভিতরে একটি কালভৈরব মূর্তি রয়েছে। এটি একটি বড় শিব মূর্তি। জানা যায়, প্রায় দুইশত বছর আগে দুর্গাচরণ আচার্য নামে এক কুমোর এই মূর্তি তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই মন্দিরের স্থানটি সরাইলের বিখ্যাত জমিদার নূর মোহাম্মদ দান করেছিলেন। মূর্তিটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকসেনারা ভেঙ্গে দেয়, পরে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
হাতিরপুল
সরাইল থানার বরইউড়া বাজার সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের প্রাচীন ইটের সেতুটি হাতির পুল নামে পরিচিত। এই সেতুটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। কথিত আছে যে, জমিদাররা হাতির পিঠে চড়ে সেতু পার হতেন, তাই হাতিরপুল নাম। এর নামকরণ সম্পর্কে আরেকটি গুজব হল যে জমিদাররা এই রাস্তায় হাঁটার সময় পুকুরের কাছে হাতিদের বিশ্রাম দিতেন।
কেল্লাশহীদ মাজার
আখাউড়া থানার খরমপুরে হযরত সৈয়দ আহমদের মাজারটি কেল্লা শহীদ মাজার নামে পরিচিত। স্থানীয়রা একে খরমপুর মাজার বলেও ডাকে। কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সাথে সিলেটে আসা ৩৬০ জন সাহাবী সৈয়দ আহমদ ছিলেন একজন। তরফ রাজ্যের রাজা আচাক নারায়ণের সাথে হযরত শাহজালাল সেনাপতি নাসিরুদ্দিনের যুদ্ধে সৈয়দ আহমদ শহীদ হন। তিতাস নদীতে তার বিচ্ছিন্ন মস্তক ভেসে গেলে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়।
তিতাস নদী
মেঘনার একটি উপনদী। আখাউড়া, আশুগঞ্জ বা নাসিরনগরে গেলে দেখা যায় তিতাসকে। নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৯৬ কিলোমিটার। নদীটি ভারতের আগরতলার পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বোরো বাড়ি
জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর তীরে একটি সুরম্য জমিদার বাড়ি। বিশাল দোতলা জমিদার বাড়িতে প্রায় শতাধিক কক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় একটি বড় নাচের হল। মন্দিরের বাড়ির ভিতরে কয়েকটি কক্ষ ছিল। কিন্তু এসবই এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রায় চল্লিশটি পরিবার বাড়িটি দখল করে সেখানে বসবাস করছে। বাড়ির সামনে খোলা উঠান। মূল প্রবেশ পথ ধরে তিতাসের নিচ দিয়ে একটি পাকা ঘাট রয়েছে।
উলচাপাড়া মসজিদ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে উলচাপাড়া গ্রামে একটি প্রাচীন এক গম্বুজ মসজিদ। ৫৩ ফুট লম্বা এবং ২২ ফুট চওড়া। এই মসজিদের দেয়াল চার ফুট পুরু। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ অপূর্ব কারুকার্যে সমৃদ্ধ। মসজিদের ভিতরে একটি ফারসি শিলালিপি থাকলেও তা পাঠোদ্ধার করা যায়নি।
বিদ্যাকুট সতীদাহ মন্দির
নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। বিদ্যাকুটের বিখ্যাত হিন্দু দেওয়ান এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়। একসময় এই মন্দিরে সতীদাহ করা হত। ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হলে এই মন্দিরে সতীদাহও বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৩৫ সালে এখানে যে মহিলার শেষ দাহ করা হয়েছিল তার নাম মন্দিরের ভিতরে একটি সাদা পাথরের ফলকে খোদাই করা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফলকটি ধ্বংস হয়ে যায়।
লাঙ্গলের বিল
জেলার নাসিরনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় লাঙ্গল বিলের অবস্থান। তিতাস নদী এই বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষায় তিতাস আর এই বিল এক হয়ে যায়। তিতাস নদীর ধারে বারবাড়ির ঠিক দক্ষিণে লাঙ্গল বিল শুরু হয়েছে।