বামপন্থী রাজনীতি হচ্ছে সেই রাজনৈতিক অবস্থান বা কর্মকাণ্ড যা সামাজিক অসাম্য ও সামাজিক ক্রমাধিকারতন্ত্র এর বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্য কে গ্রহণ বা সমর্থন করে। এই রাজনীতি বিশেষভাবে জড়িত থাকে সমাজে যারা অন্যের তুলনায় কম পায় বা সুযোগহীন থাকে তাদের ব্যাপারে এবং পূর্বধারনা করে যে অসাম্যের অবিচার কমানো বা বিলুপ্ত করা উচিত।
বামপন্থী রাজনীতি বলতে কী বোঝায়_
১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় বাম ইংরেজি left শব্দটির উৎপত্তি হয়। তখন পার্লামেন্টের ডানদিকে বসতেন শাসকদল এবং সভাপতির বাঁম পাশের আসনগুলোয় বসতেন বিরোধীদল। বাঁম দিকে বসার জন্য তাদের বলা হতো বামপন্থী বা লেফটিস্ট। সমাজতন্ত্রী ও প্রগতিশীলদেরই এখন সাধারণভাবে বামপন্থী বলা হয়। পরবর্তীকালে ফ্রান্সের অনুকরণে অন্যান্য দেশের আইনসভায়ও বিরোধী দলের সদস্যদের বামদিকে বসার রীতি চালু হয়।
বিশ শতক পরবর্তীকালে বামপন্থী হতে হলে যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা হচ্ছে বামপন্থিদের সমরাজ্যবাদ ও সম্প্রসারনবাদ বিরোধী হতে হবে। এছাড়াও বামপন্থি হতে হলে তাদের অবশ্যই সামন্তবাদ বিরোধী তথা সামন্ততন্ত্রের অবশেষ উচ্ছেদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; সবরকম সম্ভাব্য আকার ও রূপে বিরাজমান ভূমিদাস প্রথার জেরগুলো, যেমন বর্গাপ্রথার উচ্ছেদ করে ভূমিসংস্কার করতে হবে। তৃতীয়ত রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল আইন বা বিধিবিধানকে তারা সমর্থন করবে না। চতুর্থত, তারা উগ্র-জাতীয়তাবাদের বিরোধী অবস্থানে সুদৃঢ় থাকবে। যেসব দল, মানুষ এইসব মত এবং মতবাদে বিশ্বাস করে , তারাই বামপন্থী রাজনীতি করে থাকে।
বামপন্থী বলে বিবেচিত ভাবাদর্শগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে রাজনৈতিক মতপরিসর বরাবর ওভারটন উইন্ডো বসানোর উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। ১৮ শতকের শেষের দিকে প্রথম উদার গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর, বাম শব্দটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদারনীতিবাদ ও ফ্রান্সে প্রজাতান্ত্রিকতাকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হত, যা প্রথাগত রক্ষণশীল ও রাজতন্ত্রবাদীদের ডানপন্থী রাজনীতির তুলনায় নিম্ন স্তরের শ্রেণিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করতো। আধুনিক রাজনীতিতে, বাম শব্দটি সাধারণত ধ্রুপদী উদারনীতিবাদের বাম দিকমুখী ভাবাদর্শ ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু মাত্রার গণতন্ত্রকে সমর্থন করে।
আজ সামাজিক উদারনীতিবাদ ও সামাজিক গণতন্ত্রের মতো মতাদর্শগুলিকে কেন্দ্র-বাম হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে বামপন্থীরা সাধারণত পুঁজিবাদের আরও সমালোচনামূলক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন– শ্রমিক আন্দোলন, সমাজতন্ত্র, নৈরাজ্যবাদ, সাম্যবাদ, মার্কসবাদ ও সিন্ডিক্যালিজম, যার প্রতিটি ১৯ ও ২০ শতকে প্রাধান্য লাভ করে। এছাড়াও বামপন্থী শব্দটি সাংস্কৃতিকভাবে উদারনৈতিক সামাজিক আন্দোলনের বিস্তৃত পরিসরে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে নাগরিক অধিকার আন্দোলন, নারীবাদী আন্দোলন, এলজিবিটি (সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরিত লিঙ্গ) অধিকার আন্দোলন, গর্ভপাত-অধিকার আন্দোলন, বহুসংস্কৃতিবাদ, যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন ও পরিবেশ আন্দোলন, পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর বিস্তৃত পরিসর।
তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া