স্বাভাবিক ভাবেই ছোট বাচ্চারা গল্প শুনতে ভালোবাসে কিন্তু আমরা অনেকেই গল্প জানি না বা জানলেও খুব বেশি জানা নেই। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য আজকে আমারা নিয়ে এসেছি “ছোটদের গল্প” যেখানে থাকবে বিভিন্ন প্রকারের গল্প যেমনঃ ছোটদের হাসির গল্প, ছোটদের রূপকথার গল্প ইত্যাদি।
ছোটদের মজার গল্প
ছোট বাচ্চারা গল্প শুনতে খুবই ভালোবাসে। এছাড়া যদি ঘুমতে না চাইলে গল্প বলে ঘুমান যায়। ছোট বাচ্চারা বেশিরভাগ রূপকথার গল্প শুনতে ভালোবাসে। তবে সবাই এক নয় যার কারণে আমরা এখানে রূপকথার গল্পের পাশাপাশি ছোটদের হাসির গল্প এবং কিছু শিক্ষণীয় গল্প দিয়ে দেব। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাকঃ-
ছোটদের হাসির গল্প
একবার এক ঘোড়া-চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল।
ঘোড়ার মালিক চোরকে বলল : চুরির জন্য তোমাকে কঠিন শাস্তি দিতে পারি, কিন্তু এক শর্তে সে শাস্তি থেকে তুমি বাঁচতে পার।
চোর বললঃ দয়া করে আপনার শর্ত প্রকাশ করুন, আশা করি মান্য করতে পারব।
ঘোটকাধিকারী চোরকে বলল : আমাকে ঘোড়া চুরির কলাকৌশল শিখালে তোমাকে মুক্ত করে দেব।
চোর এই প্রস্তাবে আনন্দের সঙ্গে রাজি হলো এবং যথারীতি চৌর্যকলা প্রদর্শনে মনোযোগী হলো। প্রথমে ঘোটকের কাছে গিয়ে তাকে একটু আদর করল, গা-মর্দন করে দিল এবং বলল : প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। আমি আপনার ঘোড়ার বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলেছি। এখন লাথি মারার বা লাফ দেবার সম্ভাবনা নেই। এখন দেখুন গলার রশি খুলে নিলাম—এখন দক্ষ হস্তে দ্রুততার সঙ্গে লাগাম পরিয়ে ফেলতে হবে। ব্যাস, সে কাজও দেখুন কেমন স্বচ্ছন্দে করে ফেললাম। এবার একটু সতর্কতার সঙ্গে ক্ষিপ্রগতিতে ঘোড়ায় চড়ে বসতে হবে। এখন দু’পা দিয়ে ঘোড়ার পেটে আগাত করুন এবং ঘোড়াকে বেত্রাঘাত করুন। ঘোড়া দুলকি চালে ছুটে চলল।
চোর বলল : এভাবেই ঘোড়া চুরি করতে হয়। তবে ঘোড়ার মালিককে সামনে রেখে এভাবে ঘোড়া নিয়ে চম্পট দেয়ার মজাই আলাদা। এই স্মরণীয় চুরির সুযোগ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
চোর ঘোড়া নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে অদৃশ্য হয়ে গেল। মালিক অন্য ঘোড়া নিয়ে তাড়া করেও চোরকে ধরতে পারল না।
ছোটদের রূপকথার গল্প
সে অনেক কাল আগের কথা ,দূর হিমালয়ের কোলে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করত সামদ্রুপ নামে এক অসীম সাহসী তরুন। সারা দিনমান চমরী গাই চড়াত আর রাতে চুলার পাশে বসে বসে চাদর বুনত। গ্রামে সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করত।
একবার হয়েছি কি সামদ্রুপ এর দাদীর ভীষণ অসুখ ,এখন কি করা। বদ্দি যে পথ্যি আনতে বলল তা তো শহর ছাড়া পাওয়া যায় না আর শহরে যেতে সময় লাগে দুই দিন এক রাত। সে যে দূরের উপত্যাকায় শহর।
সামদ্রুপ এর গাঁয়ের সবাই প্রয়োজনে দল বেধে শহরে যেত ,একা একা কেউ যেত না। কারন শহরে যাওয়ার পথে ছিল পদে পদে বিপদ। পাহাড়ি রাস্তা আর গিরি খাতের বাঁকে বাঁকে বন্য পশু ,ইয়েতি ছাড়াও ছিল ভূতের ভয়।
কিন্তু সামদ্রুপ তার দাদীকে ভীষণ ভালবাসত তাই সে ঝুকি নিয়েও তৈরি হল শহরে যেতে । খুব সকাল সকাল সূর্য যখন পাহাড়ের বরফ ঢাকা চূড়া গুলোকে সোনালি আভায় আলোকিত করতে শুরু করেছে তখন ই সে রওয়ানা দিল শহরের পথে । বাড়ির সবাই তাকে পই পই করে বলে দিল সাবধানে থাকতে।
সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে ,ফুল পাখিদের সাথে কথা বলতে বলতে আর নিজের মনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সে এসে পৌঁছাল পাহাড়ের ঢালে ,রাতটুকু হাতলে কাল দুপুর দুপুর পৌঁছে যাবে শহরে । ওইদিকে সূর্য হঠাত করেই চলে গেল পাহাড়ের আড়ালে।
সাহসী সামদ্রুপ তারপরও হাঁটতে লাগলো তার নিজের গন্তব্যের দিকে । মাঝরাতে চাঁদের ঘোলা আলোয় পাহাড়ে পাইনের বনের ধারে হঠাত তার দেখা হল এক ভূতের সাথে।
কে রে তুই ? এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস ? খ্যানখ্যানে গলায় হেঁকে উঠল ভূত।
হে হে আমায় চিনলে না ,আমি ওই দূর পাহাড়ের কাছে যে পুরানো ঝং আছে সেই ঝং এর ভূত।
মনে মনে ভয় পেলেও মুখে তা প্রকাশ করল না সামদ্রুপ।
ভূত তাকে বিশ্বাস করল ,আর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আপাতত রক্ষা পেল সামদ্রুপ।
ভূতের হাতে ছিল এক বিশাল বস্তা । ভূত সামদ্রুপকে বস্তাটা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে বলল।
মনে মনে রাগ হলেও কিছুই করার নাই তাই সামদ্রুপ ভূতের কথা মতই কাজ করল।
আশ্চর্য ব্যাপার ,এত্ত বড় বস্তা অথচ বাতাসের মত হালকা , নিজের মনেই বলল সামদ্রুপ।
এরপর তারা একসাথে হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর ভূত বেশ খোশ মেজাজে গল্প শুরু করল।
ইয়ে এই বস্তাটা এত্ত বর কিন্তু এক্কেবারে হালকা , মিনমিন করে বলল সামদ্রুপ।
আরে বোকা হালকা তো হবেই ,ওর মাঝে আছে শুধু রাজকন্যার আত্মা ,আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি , খ্যানখ্যানিয়ে বলে উঠল ভূত।
বলছ কি ? আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করল সামদ্রুপ।
হ্যাঁ রে ,আর এই জন্যই তো রাজকন্যা ভীষণ অসুস্থ ,হাসিমুখে উত্তর দিল ভূত।
ওমা তাহলে তো রাজকন্যা আর বাঁচবে না ,সভয়ে আবারও বলল সামদ্রুপ।
পৃথিবীর কোন বদ্যির সাধ্য নাই এই আত্মা ছাড়া ওকে বাঁচানোর , সদম্ভে উত্তর দিল ভূত।
হুম ,আস্তে করে বলল সামদ্রুপ। হঠাত করেই দয়ালু সামদ্রুপ এর মনটা ভারী হয়ে উঠল রাজা আর রাজকন্যার জন্য।
সে করল কি সুযোগ বুঝে হুট করে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল গম ক্ষেতে।
এদিকে ভূত তো রেগে অস্থির ,কিন্তু বেশীক্ষণ খোঁজাখুঁজির সুযোগ পেল না। কারন দিনার আলো ফুটতে শুরু করেছে।
আলো এসে ভুতের গাঁয়ে পড়ার সাথে সাথেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
কালবিলম্ব না করে সামদ্রুপ দৌড় দিল রাজার প্রাসাদে।
আত্মা ফিরে পেয়ে মরণাপন্ন রাজকন্যা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল। চারপাশে বয়ে গেল খুশির বন্যা।
রাজা সামদ্রুপ এর কাছে সব শুনে পথ্যি যোগাড় করে পাইক পেয়াদা দিয়ে তা পাঠিয়ে দিল সামদ্রুপ এর গাঁয়ে।
আর রাজকন্যার বিয়ে দিয়ে দিল সাহসী ,দয়ালু আর বুদ্ধিমান সামদ্রুপ এর সাথে। সামদ্রুপ পরবর্তীতে সে রাজ্যের রাজা হয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগল। সাহস ,দয়া উপস্থিত ,বুদ্ধি আর ভাগ্য সহায় থাকলে সব সম্ভব এই পৃথিবীতে।
আর তাইত সেই রাজ্যের নাম হয়ে গেল সামদ্রুপ ঝংখা। যা আজও ভুটানের এক শহর হিসাবে আছে।
ছোটদের শিক্ষণীয় গল্প
১। ছোট্ট এক ছেলে ছিলো প্রচন্ড রাগী। তাই দেখে বাবা তাকে একটা পেরেক ভর্তি ব্যাগ দিল এবং বললো যে, যতবার তুমি রেগে যাবে ততবার একটা করে পেরেক আমাদের বাগানের কাঠের বেড়াতে লাগিয়ে আসবে। প্রথমদিনেই ছেলেটিকে বাগানে গিয়ে ৩৭ টি পেরেক মারতে হলো। ….
পরের কয়েক সপ্তাহে ছেলেটি তার রাগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারে তাই প্রতিদিন কাঠে নতুন পেরেকের সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে এলো। সে বুঝতে পারলো হাতুড়ী দিয়ে কাঠ বেড়ায় পেরেক বসানোর চেয়ে তার রাগকে নিয়ন্ত্রন করা অনেক বেশি সহজ।
শেষ পর্যন্ত সেই দিনটি এলো যেদিন তাকে একটি পেরেকও মারতে হলো না। সে তার বাবাকে এই কথা জানালো। তারা বাবা তাকে বললো এখন তুমি যেসব দিনে তোমার রাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারবে….
সেসব দিনে একটি একটি করে পেরেক খুলে ফেলো। অনেক দিন চলে গেল এবং ছেলেটি একদিন তার বাবাকে জানালো যে সব পেরেকই সে খুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।তার বাবা এবার তাকে নিয়ে বাগানে গেল এবং কাঠের বেড়াটি দেখিয়ে বললো..
‘তুমি খুব ভাল ভাবে তোমার কাজ সম্পন্ন করেছো,এখন তুমি তোমার রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারো কিন্তু দেখো, প্রতিটা কাঠে পেরেকের গর্ত গুলো এখনো রয়ে গিয়েছে। কাঠের বেড়াটি কখনো আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না।…
যখন তুমি কাউকে রেগে গিয়ে কিছু বলো তখন তার মনে ঠিক এমন একটা আচড় পরে যায়। তাই নিজের রাগতে নিয়ন্ত্রন করতে শেখো।মানসিক ক্ষত অনেক সময় শারীরিক ক্ষতের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর……
২। এক চালাক ব্যক্তি কয়েকজন লোকের উদ্দেশ্যে একটি মজার জোকস বললেন।এটি শুনে সবাই পাগলের মতো হাসতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর লোকটি সবার উদ্দেশ্যে আবার সেই একই জোকসটি বললেন।এবারও তাদের মধ্যে কয়েকজন লোক হাসলেন ও বাকীদের আর হাসি আসলো না।
এরপর সেই চালাক ব্যক্তি একই জোকস বার বার বলতে লাগলেন। শেষে এমন অবস্থা হলো সে বার বার একই জোকস শুনে হাসার মতো আর কেউ থাকলো না।
এবার তিনি মুচকি হাসলেন এবং সবার উদ্দেশ্যে বললেন, দেখো। তোমরা একই জোকস শুনে বার বার হাসতে পারো না। তাহলে কেন তোমরা জীবনে পাওয়া কোন একটা কষ্টের জন্যে দিনের দিন কাঁদতে থাকো?