দোয়া ইউনুস মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। ইউনুস (আঃ) যখন বিপদে পরেছিলেন তিনি মহান আল্লাহ্র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে একটি দোয়া করেছিলেন এরপর মহান আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করে নেন এবং তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
সেই মাছের উদর-অন্ধকারে বসে ইউনুস (আ.) অত্যন্ত বিনয়-নম্রতা ও কাতরস্বরে আল্লাহর কাছে অনবরত দোয়া করতে শুরু করেছিলেন। তিনি যে দোয়াটি পড়েছিলেন, তা দোয়া ইউনুস নামে সবার কাছে পরিচিত।
আল্লাহ তাআলা তার কাহিনি বর্ণনা করে বলেন_
‘মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন; তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাকে পাকড়াও করবো না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন- তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তুমি পবিত্র, আমি গুনাহগার। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত :৮৭)
মাছের পেটের কাহিনি
পবিত্র কোরআনে কারিমে ইউনুস (আ.)-এর নামে একটি সুরা রয়েছে। তেমনি ‘ইউনুস’ নামটিও পাঁচ স্থানে উল্লেখ হয়েছে। ইউনুস (আ.)-কে কোরআনে ‘জুন্নুন-সাহিবুল হূত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। জুন্নুন শব্দের অর্থ মাছের সঙ্গে সম্পৃক্ত আর সাহিবুল হূত শব্দের অর্থ মৎস্য সহচর বা মাছওয়ালা।
আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) নিনেভায় প্রেরিত হন। এটি তৎকালীন ইরাকের মসুলে অবস্থিত। তিনি নিনেভার লোকজনকে আল্লাহর দিকে ডেকেছিলেন। কিন্তু তারা তার ডাকে সাড়া না দেয়নি। এতে তিনি মর্মাহত হয়ে তাদের আল্লাহর গজবের খবর দেন। এবং আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিনেভা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে রওনা হন।
পথিমথ্যে সম্মুখে সমুদ্র পড়লে, তা পাড়ি দেওয়ার জন্য তিনি একটি জাহাজে ওঠেন। জাহাজটি মাঝসমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে, যে জাহাজের জন্য বিপাক ডেকে এনেছে। পরে সেকালের নিয়ম অনুযায়ী লটারির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু লটারিতে বারবার ইউনুস (আ.)-এর নাম ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে সমুদ্রে ফেলে দিলে জাহাজটি বিপাক থেকে রক্ষা পায়, আর একটি বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে। (ফাতহুল বারি, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ২১২)
দোয়া ইউনুস আরবি_
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়া ইউনুসের বাংলা উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।
দোয়া ইউনুস বাংলা অর্থ : তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত।
দোয়া ইউনুস পাঠের ফজিলত
দোয়া ইউনুসের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) এই দোয়া পাঠ করেই আল্লাহর রহমতে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কেউ দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়। কেউ যদি বিপন্ন বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়।
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এই দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা কি কেবল ইউনুস (আ.)-এর জন্যই প্রযোজ্য, না সব মুসলিমের জন্য? জবাবে প্রিয়নবী (সা.) বলেন,
তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য দোয়াটি বিশেষভাবে কবুল হলেও এটা সব মুসলিমের জন্য সবসময় কবুলের ব্যাপারে প্রযোজ্য। তুমি কি কোরআনে পাঠ করোনি, ‘ওয়া কাজালিকা নুনজিল মুমিনিন- আর এভাবেই আমি আল্লাহ মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)
দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত
কোনো বিপদে পরে দোয়া ইউনুস পড়লে ,আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। প্রতিদিন ১০০০ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করলে পদমর্যাদা হয়। দোয়া ইউনুস পাঠ করলে রুজি রোজগার বৃদ্ধি পায় ,দুঃখ -কষ্ট ,পেরেশানি দূর হয়।
এ দোয়া এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পড়লে (যেটা খতমে ইউনুস নাম পরিচিত )সব রকম বিপদ আপদ থেকে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।