দেহ ও প্রাণের সমষ্টিই ইসলাম
ওয়াহিদ আমিম
আমরা এমন এক যুগে বাস করি—যাতে ইসলাম চর্চা অত্যন্ত সহজলভ্য। ইসলামি বইয়ে বাজারের লাইব্রেরীগুলো যেমন সয়লাব, নেটের দুনিয়াতেও ইসলামি তত্ত্ব ও তথ্যের ভান্ডার পূর্বের যেকোনো যুগের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। ফলে মানুষের মাঝে ইসলাম জানার প্রবণতা বাড়ছে একথা সত্য; কিন্তু সঠিকভাবে তা মানার প্রবণতা খুবই কম। আর যারা জানছে—তারা জেনেই সন্তুষ্ট হয়ে থাকছে। কিন্তু তা ভুল না শুদ্ধ—এ নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে তারা ইসলামের দেহাবয়বকে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, প্রাণকে ততোটা গুরুত্ব কখনোই দেয় না। অনেকে তো আবার ইসলামের যে দেহাবয়াব ও প্রাণ নামে দুটি অনুসঙ্গ আছে তা স্বীকারই করতে চায় না।
এ শ্রেণীর মানুষ ইসলামের দেহাবয়বকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ফলে তারা গুরুত্ব দেয় দাড়ি লম্বা করার, মুছ খাটো রাখার, মিসওয়াক করার, নামাজে গোড়ালির সাথে গোড়ালি লাগিয়ে দাঁড়ানোর, সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় হতা নাভীর নিচে রাখবে নাকি বুকের ওপর তার। তারা সব ধরনের গান ও সুরকে নিষিদ্ধ মনে করে, মহিলাদের জন্য আবশ্যিক মনে করে নিকাব পরিধান করা। অথচ এ ধরনের ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রত্যেকটিই এমন_যা ইসলামের অভ্যন্তরীন আবরনের বদলে বাহ্যিক অবয়াববের সাথেই বেশি সংশ্লিষ্ট।
এ শ্রেণীর লোকেরা যদি ইসলামের এসব বাহ্যিক দেহাবয়বের বদলে অভ্যন্তরীন দেহাবয়াব, প্রাণশক্তি ও ইসলামি শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিত, তাহলে তা হতো বেশি কল্যাণকর ও উপকারী।
কারণ, ইসলাম এমন একটি আকিদা, যার প্রাণ হচ্ছে তাওহিদ; এমন একটি ইবাদত, যার প্রাণ হচ্ছে ইখলাস; এমন লেনদেন, যার প্রাণ হচ্ছে সত্যবাদিতা; এমন চরিত্র, যার প্রাণ হচ্ছে করুণা ও দয়া; এমন শরিয়া, যার প্রাণ হচ্ছে আদল ও ইনসাফ; এমন আমল, যার প্রাণ হচ্ছে দৃঢ়তা ও নিপুণতা; এমন শিষ্টাচার, যার প্রাণ হচ্ছে সুস্থরূচিবোধ; এমন সম্পর্ক, যার প্রাণ হচ্ছে ভ্রাতৃত্ব; এমন সভ্যতা, যার প্রাণ হচ্ছে সুষম হওয়া।
অতএব কেউ যদি আকিদার ক্ষেত্রে তাওহিদকে নষ্ট করে; ইবাদতের ক্ষেত্রে ইখলাসকে বিনষ্ট করে; লেনদেনের ক্ষেত্রে নষ্ট করে সততা; চারিত্রিক ক্ষেত্রে খুঁয়ে বসে নিষ্কলুষতা; শরিয়ার ক্ষেত্রে হারিয়ে ফেলে আদল; আমল থেকে হারিয়ে ফেলে দৃঢ়তা, শিষ্টাচার থেকে হারিয়ে ফেলে রুচিবোধ, সম্পর্কের ক্ষেত্রে হারিয়ে ফেলে ভ্রাতৃত্ববোধ, সভ্যতা থেকে হারিয়ে ফেলে সুষমতা, তাহলে সে যেন ইসলামের প্রকৃত প্রাণকেই হারিয়ে ফেললো_যদিও আটকে ধরে রাখলো ইসলামের বাহ্যিক অবয়ব ও কাজগুলোকে।
আমার একথা দলিলহীন কোনো সাধারণ মৌখিক দাবি নয়; বরং এ বিষয়ে প্রচুর দলিল বিদ্যমান। রাসূল সা. বলেছেন,
‘চারটি গুণ যার মধ্যে থাকবে, সে নিশ্চিত মুনাফিক_যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে খাঁটি মুসলমান হিসেবে দাবিও করে। আর যদি কারও মধ্যে এর একটি গুণ থাকে, তাহলে তার মধ্যে নিফাকের একটি গুণই বিদ্যমান থাকলো_যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। গুণ চারটি হলো_কথা বললে মিথ্যা বলে। আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে। ঝগড়া করলে অশ্লীল কথা বলে।’ বুখারি : ৩৪; মুসলিম : ২১৯