ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া ঐতিহ্যগতভাবে আখের চিনির জন্য বিখ্যাত। আখ মাড়াই করে সংগ্রহ করছে রস। এই রস থেকে হাতে তৈরি হচ্ছে লাল চিনি। লাল চিনি তৈরির ধুম পড়েছে পলাশতলী, রঘুনাথপুর ও রাধাকানাই এলাকায়। অগ্রাহায়ণ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত লাল চিনি উৎপাদিত হয়। হাতে তৈরি লাল চিনি কেমিক্যালমুক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ঈশ্বরদী জাতের আখ লাল চিনি উৎপাদনের জন্য অধিক কার্যকরী ও লাল মাটিতে রোপিত আখ থেকে অধিক লাল চিনি উৎপাদন হয়।
জানা গেছে, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আখের রস থেকে সরাসরি হাতে লাল চিনি তৈরি করা হয়। প্রায় ২০০ বছর যাবত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আখ থেকে হাতে লাল চিনি তৈরি করছেন কৃষকরা। সরকারি সহায়তা না পাওয়া, শ্রমিক সংকট, মজুরি বৃদ্ধি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন কৃষকরা। সরকারি সহায়তা পেলে দেশের চিনির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই লাল চিনি।জেলা কৃষি অফিস জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ময়মনসিংহ জেলায় ২ হাজার ৬৫৯ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়ে।এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় ২ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ৯২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। তবে আখচাষের মৌসুম শেষ না হওয়ায় উৎপাদনের হিসাব করা হয়নি। অর্থাৎ গত এক বছরে জেলায় আখের চাষ কমেছে ২৬২ হেক্টর এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলায় কমেছে ৩৬০ হেক্টর।সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার অন্য উপজেলা থেকে ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় তুলনামূলক বেশি আখ চাষ করা হয়। এর মাঝে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা, রাধাকাই, আছিম ইউনিয়ন উল্লেখযোগ্য। তবে আখ থেকে লাল চিনি উৎপাদনে এগিয়ে রাধাকানাই ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রাম। এক সময় এই গ্রামের প্রায় সব পরিবার লাল চিনি তৈরিতে জড়িত ছিল। তবে বিগত কয়েক বছরে পলাশতলী গ্রামের কৃষকরা আখচাষ ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছেন।প্রথমে আখ কেটে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মাড়াই কলের সাহায্যে তা থেকে রস বের করা হয়। তার পাশেই তৈরি করা হয় জ্বাল ঘর। সেখানে তৈরি করা হয় ৭টি চুলা। জ্বাল ঘরের চুলায় ৭টি লোহার কড়াই বসানো হয়। তারপর প্রথম কড়াইয়ে পরিমাণমতো কাঁচা রস দিয়ে জ্বাল দেওয়া শুরু করা হয়। জ্বাল দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর প্রথম কড়াই থেকে দ্বিতীয় কড়াইয়ে, তারপর তৃতীয় কড়াইয়ে এভাবে সপ্তম কড়াইয়ে জ্বাল দেওয়া রস কাঠের হাতা দিয়ে স্থানান্তর করা হয়।এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, দেশে চিনির উৎপাদন বাড়াতে আখ চাষ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে লাল চিনির মতো ব্যতিক্রমী এই পণ্যকে দেশের বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে নিতে পারলে অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন বার্তা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। লাল চিনি নিয়ে আরও গবেষণা এবং বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতের নেওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ
ফুলবাড়িয়া লাল চিনি
- May 7, 2024
- 9:30 am
আরো পড়ুন