যেনা ভ্যবিচার ও পরকীয়ার মতো এ সমস্ত পাপ অত্যন্ত ভয়াবহ ও জঘন্য পাপ। তাহলে যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে? অবশ্যই; মহান আল্লাহ্ তায়ালা পরম দয়ালু তিনি চাইলেই আপনাকে মাফ করে দিতে পারবেন। যেনার কারণে একজন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অপমানিত হতে হবে। একইভাবে পরিবারে সমাজে লজ্জার মোকাবেলা করতে হয়। বিচ্ছিন্নতা কমপক্ষে তিন বা চারটি পরিবারকে প্রভাবিত করেছিল। অপরিচিত একজনের কারণে তিন-চারটি পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাই প্রত্যেক নর-নারীর উচিত এসব গুনাহ থেকে দূরে থাকা।
যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে?
এখন প্রশ্ন হল, কেউ যদি এই পাপ করে, সেই পাপ থেকে ফিরে আসার উপায় আছে কি…? আর উপায় থাকলে মানুষ পাপ করবে এবং ক্ষমা চাইবে। এই ক্ষেত্রে, বক্তব্যটি নিম্নরূপ: একটি ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক: ধরুন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আপনি একটি বিশাল প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন এবং এই কাজটি ভাল জানেন। একদিন, সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে, আপনি একটি ভুল করেছেন বা একটি অনৈতিক কাজ করেছেন।
আপনার ভুলের কারণে কোম্পানি যদি আপনাকে এই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এবং আপনি নিশ্চিত হন যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পরে আপনাকে বরখাস্ত করা হবে তা ভাল। তাহলে আপনি এই কাজটি খুব মনোযোগ এবং যত্ন সহকারে করতে পারবেন না। অন্যদিকে, যদি আপনি ক্রমাগত ভুলের কারণে এই কোম্পানির সাথে আপনার চাকরি হারান, অন্য কোন কোম্পানি আপনাকে নিয়োগের বিষয়ে দুবার ভাববে।
কিন্তু আপনি যদি এটা শিওর না হতেন যে আপনাকে কাজ থেকে বের করে দিতেও পারে আবার মন থেকে ক্ষমা চাইলে মালিক আপনাকে ক্ষমা করে দিতে পারে। তাহলে কোথাও না কোথাও আপনার মধ্যে প্রজেক্টের বাকি কাজটায় মনোযোগ অধিক হয়ে যাবে এবং আপনি চেষ্টা করবেন কাজের মধ্যে যেন আর কোন ভুল না হয়। যেন মালিক সন্তুষ্ট হয়ে আপনাকে কাজ থেকে বের করে না দেয়। সেজন্য আপনি প্রানপনে ভাবে চেষ্টা করবেন যেন ভবিষ্যতে আপনার কাজের মধ্যে আর কোন ভুল না হয়
একইভাবে, পাপ করার পর যদি আপনি নিশ্চিত হন যে এই গুনাহের কোনো ক্ষমা নেই, তাহলে আপনার মধ্যে একধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হবে। তুমি মনে কর আমি পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে দিচ্ছি, কারণ তুমি অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। তোমার বেপরোয়া পাপের কারণে সমাজের অন্য মানুষ কষ্ট পাবে। অতএব, সবাই যদি একইভাবে চিন্তা করতে থাকে তবে মানুষের পাপের প্রতি চরম প্রবণতার কারণে এই বিশ্বের সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়বে।
কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে তাকে ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতির জন্য আল্লাহর শুকরিয়া, অধিকাংশ মানুষ পাপ করলেও তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়। এতে সমাজের ভারসাম্য বজায় থাকে। কেয়ামতের আগে তওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে পৃথিবী এক চরম নৈরাজ্যের জগতে পরিণত হবে। অতএব, আমাদের সকলকে এখনই আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, যখন এখনও অনুশোচনা করার সময় আছে।
মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ যখন কেউ অশ্লীল কাজ করে কিংবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে অতঃপর আল্লাহকে স্মরণ করে এবং অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ ব্যতীত কে’বা অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে…? এবং তারা যা করছে সেই ব্যাপারে জেনে শুনে হঠকারিতা করেনা/ জেনেশুনে বার বার করেনা।( সূরা আল ইমরান আয়াত ১৩৫)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ তারা আল্লাহর সমীপে কেন তওবা করেনা এবং তার কাছে কেন ক্ষমা প্রার্থনা করে না….? অথচ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।( সূরা আল মায়েদা আয়াত ৭৪)
সুপ্রিয় পাঠক অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে যেনার মতো কাজ করে ফেললে। যেনা-ব্যভিচার মতো অপরাধ করে ফেললে ব্যভিচার বা পরকীয়া করে ফেললে কিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট তওবা করব এবং কিভাবে এই অপরাধ থেকে আল্লাহ দরবারে ক্ষমা পাবো। তো সুপ্রিয় পাঠক এই সম্পর্কে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করবো।
হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ আবু দাউদ শরীফের এসেছে হাদিস নাম্বারঃ ১৫২১। তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ যেকোন বান্দা কোন গুনাহ লিপ্ত হওয়ার পর উত্তমরূপে ওযু করবে। তারপর দন্ডায়মান হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়বে, দু’রাকাত নামাজ পড়ার পর অতঃপর ইস্তেগফার করবে অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মার্জনা করে দেবেন এবং সে বান্দাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন। এই কথা বলার পর রাসূল (সাঃ) সূরা আল ইমরানের ১৩৫ নম্বর আয়াত পাঠ করে শোনালেন।