সিরাজগঞ্জ পর্যটন স্পট: যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে এবং ঢাকা শহর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত সিরাজগঞ্জ জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান।
জেলার ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক বৈচিত্র্যময়। সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো হল বাঘাবাড়ী নদী বন্দর, নবরত্ন মন্দির, জয়সাগর দীঘি, শাহজাদপুর মসজিদ, ইলিয়ট ব্রিজ, চলন বিল মখদুম শাহের মাজার, যমুনা বহুমুখী সেতু, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ, ইকো পার্ক।
সিরাজগঞ্জ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জন্যও বিখ্যাত এবং সেখানে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ তার বাড়ি দেখতে যায়।
সিরাজগঞ্জ জেলার ৭টি সেরা পর্যটন আকর্ষণ
১. চায়না বাঁধ সিরাজগঞ্জের একটি পর্যটন স্থান।
২. হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জের একটি ঐতিহাসিক স্থান।
৩. রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি।
৪. যমুনা সেতু।
৫.বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক সিরাজগঞ্জের একটি পিকনিক স্পট।
৬. শাহজাদপুর মসজিদ।
৭. চলনবিল।
সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ:
বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু এবং বিশ্বের ১১তম দীর্ঘতম সেতু। উত্তরবঙ্গের সাথে দেশের সরাসরি সংযোগকারী সেতুটি ১৯৯৭ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এটি ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৯.৫ মিটার চওড়া। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ সড়কে সেতুটির দূরত্ব ১১৯ কিলোমিটার। সেতুর দুই পাশে দুটি রেলস্টেশন থাকায় লোকাল ট্রেনে করে যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করা সহজ। আপনি গাড়িতে করেও এই সেতু যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
যমুনা প্রতিরক্ষা বাঁধ/ চায়না বাঁধ
সিরাজগঞ্জ শহরকে যমুনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৭ সালে এখানে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ নগর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। স্থানটি এখন শহরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় এখানকার সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়। এখানে বসেই উপভোগ করা যায় যমুনার সৌন্দর্য।
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির
জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল এলাকার নবরত্নপাড়া গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির। সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কের পাশে এই এলাকায় আরও কয়েকটি ছোট ছোট প্রাচীন মন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলি ১৬০৪-১৮২০ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে তাঁর নায়েব দেওয়ান রামনাথ ভাদুড়ী দ্বারা নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রধান নবরত্ন মন্দিরটি তিনটি তলা বিশিষ্ট। এই ইট-সুরকি মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হল দেয়ালে টেরাকোটা খোদাই করা।
রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি
জেলার শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত একটি কাচারিবাড়ি রয়েছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নিলামে নীলকরদের একটি কারখানা কিনেছিলেন। ২৯ বছর বয়সে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জমিদারি দেখাশোনা করতে ১৮৯০ সালে শাহজাদপুরে আসেন। এরপর থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজ এখানেই চলে এসেছে। এখানে অবস্থানকালে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ভাগের ফলে শাহজাদপুরের জমিদারি রবীন্দ্রনাথের অংশীদারদের কাছে চলে যায়। তাই ১৮৯৭ সালে তিনি শাহজাদপুর ত্যাগ করেন। জমিদারি খাজনা আদায়ের জন্য এখনও একটি পুরাতন দ্বিতল ভবন রয়েছে, যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকো পার্ক
সিরাজগঞ্জ জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকো পার্ক। বন বিভাগ বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১২০ একর জমি নিয়ে ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করে। সবুজ গাছে ঢাকা পার্কটি যমুনা নদী ও বঙ্গবন্ধু সেতুর অপূর্ব দৃশ্য দেখায়। শান্ত ও ঘন ছায়ায় ঘেরা অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকো-পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
শাহজাদপুর মসজিদ
জেলার শাহজাদপুর উপজেলার শেষ প্রান্তে দরগাপাড়ায় হুরাসাগর নদীর তীরে এই মসজিদটি অবস্থিত। জানা যায়, মসজিদটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলের একজন সুফি সাধক ও শাসক মখদুম শাহ নির্মাণ করেছিলেন। বর্গাকার এই মসজিদটিতে পনেরটি গম্বুজ রয়েছে। এর তিনটি সারিতে পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। এই মসজিদের সবচেয়ে দর্শনীয় বৈশিষ্ট্য হল গম্বুজের সাতটি ধাপ বিশিষ্ট দোতলা মিম্বর।
চলনবিল
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিলের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। বর্ষায় বেড়াতে এলে চলন বিলের অপরূপ সৌন্দর্য ঘুরে আসতে পারেন।