প্রতি রমজানের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতে হয়। ইতিকাফের নিয়ম জেনে ইতিকাফ না করলে যথাযথভাবে পলন করা হবে না। আজকের মূল আলোচনা এতেকাফ করার নিয়ম ও এর ফজিলত সম্পর্কে।
ইতিকাফ হল মুসলিমদের একটি ধর্মীয় চর্চা, যেখানে একজন মুসলিম তার নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী এক বা একাধিক দিন নিকটবর্তী মসজিদে দিনানিপাত করেন। ইতিকাফ তিন প্রকারের হয়ে থাকে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
Table of Contents
Toggleইতিকাফের নিয়ম
ইতিকাফ ৩প্রকার। যথাঃ
১। সুন্নত ইতিকাফ।
২। নফল ইতিকাফ।
৩। ওয়াজিব ইতিকাফ।
সুন্নত ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।
নফল ইতিকাফ
সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো।
ওয়াজিব ইতিকাফ
নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধা হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি এত দিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
ইতিকাফের ফজিলত : ইতিকাফের প্রধান ফজিলত হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম র: বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা এবং স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা, যাতে তার চিন্তা ও ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে।’
ইতিকাফ / এতেকাফ করার নিয়ম
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতিকাফ করতেন। যেকোনো মসজিদে পুরুষেরা ইতিকাফ করবে। মহিলারা গৃহে ইবাদতের স্থান তৈরি করে ইতিকাফ করবে। কোনো অসুস্থ ব্যক্তি অথবা মুসাফির রোজা না রেখে এই দশ দিন ইতিকাফ করলে সুন্নাতে মোয়াক্বাদাহ আদায় হবে না, বরং নফলের সওয়াব পাবে। ইতিকাফকারীর পায়খানা, প্রস্রাব, অজু ও গোসলের সময় ব্যতীত মসজিদ হতে বের হওয়া নিষেধ।
প্রয়োজনের সময় বের হলে কারো সাথে কোনো কথা বলতে পারবে না। কাজ সমাধা করে তাড়াতাড়ি মসজিদে ঢুকতে হবে। বিনা কারণে এক মিনিট মসজিদের বাইরে থাকলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইতিকাফ অবস্থায় কারো সাথে অপ্রয়োজনীয় আলাপ করা যাবে না। আবার ইতিকাফের নিয়তে চুপ করে থাকাও মাকরূহ। ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, দোয়া, দরুদ, এস্তেগফার, তজবিহ, তাহলিল, নফল ইবাদত, মোরাকাবা ইত্যাদিতে নিয়োজিত থাকা উচিত। ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে খাওয়া-দাওয়া করবে। বাইরে খাওয়া-দাওয়া করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে
মহিলাদের ইতিকাফের নিয়ম
১। নারীরা তাদের ইতিকাফের স্থান পর্দা দিয়ে ঢেকে নিবেন। যেন ঘরে কোনো বেগানা পুরুষ লোক আসলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে না হয়।
২। বিবাহিত নারী ইতিকাফ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। আর স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)
৩। স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা গ্রহণযোগ্য নয় এবং স্ত্রীর জন্য তা মানাও জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)