Search
Close this search box.

পূণ্যময় রমজান

ওয়াহিদ আমিম

আর অল্প কদিন পরেই শুরু হচ্ছে রমজান। রমজান নিয়ে আমাদের নেই কোন পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতি। অথচ আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাস এলেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। অন্য সব ব্যস্ততা মুক্ত হয়ে নিজেকে কেবল ইবাদাতে নিয়োজিত করতেন। সাহাবাদিরকেও রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিতেন। নিজেও বেশি নফল রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরকেও রাখতে বলতেন।

প্রত্যেক জিনিসেরই কিছু ভিত থাকে—যার ওপর তা স্থাপিত ও নির্মিত হয়। ইসলামেরও রয়েছে পাঁচটি ভিত্তি খুঁটি—যার ওপর নির্মিত হয়েছে ইসলাম নামক প্রাসাদ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের ওপর। ১. একথার সাক্ষ্য দেওয়া—আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। ৩. জাকাত দেয়া। ৪. বায়তুল্লাহয় হজ করা। ৫. রমজান মাসে রোজা রোখা। বুখারি : ৪৫১৫; মুসলিম : ১৫

অতএব রোজা ইসলামের পঞ্চভিত্তির একটি। এটি ছাড়া ইসলাম অসম্পূর্ণ। কেউ যদি রোজা না রাখে আর সে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে, তার সে দাবিও অযথার্থ।
রোজার মাধ্যমে আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য অর্জিত হয়। এর বিনিময়ে বান্দাকে দেয়া হয় অগণিত সাওয়াব। হাদিসে কুদসিতে এসেছে—
عن أَبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” قَالَ اللَّهُ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—রোজা ছাড়া বনি আদমের প্রত্যেক আমলই তার নিজের জন্য। কেবল রোজা আমার জন্য। আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব। বুখারি : ১৯০৪

আল্লাহ নিজ হাতে যে প্রতিদান দেবেন, নিশ্চয় তা সামান্য কোনো প্রতিদান হবে না। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এ প্রতিদান কত বড় হতে পারে তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

আরও পড়ুন  পানি খাওয়ার দোয়া ও নিয়ম

كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ، قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: ” إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي “.

আদম সন্তানের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। কেবল রোজা ছাড়া—কারণ তা বিশেষভাবে আমার জন্যই করা হয়েছে এবং আমি নিজে তার প্রতিদান দেব। যেহেতু সে আমার কারণেই নিজের প্রবৃত্তি পূরণ থেকে বিরত থেকেছে এবং খাবার-পানীয় গ্রহণ থেকেও। মুসলিম : ১১৫১

এ হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়—রোজার প্রতিদান হবে বেহিসাব। গণনা করে যার পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় না।
কারও মনে প্রশ্ন জন্ম নিতে পারে—প্রত্যেক আমলই তো আল্লাহর জন্য করা হয়। কোন আমলই তো আল্লাহ ছাড়া কারও জন্য নিবেদন করা হয় না। তাহলে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে রোজার কথা কেন বললেন—তা বিশেষভাবে আমার জন্য করা হয়েছে।

জবাব হলো—প্রত্যেক আমলেই রিয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে—হতে পারে তা আপনি আল্লাহর জন্য না করে অন্যকে দেখানোর জন্য করছেন। কিন্তু রোজার মধ্যে সামান্যও এ সম্ভাবনা নেই। কারণ—একজন মানুষ সব সময় অন্যের সামনে থাকে না যে তাকে দেখানোর জন্য না খেয়ে থাকবে। সারাদিনে সামান্য সময় হলেও সে নির্জনে কাটায়। যখন তাকে দেখার মত আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকে না। সে সময় ইচ্ছে করলেই ব্যক্তি কিছু খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু সে আল্লাহর ভয়েই তখনও খায় না। কেবল আল্লাহর ভয় ছাড়া তার মধ্যে আর কোনো ভয়ই কাজ করে না। মূলত একারণেই রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন।

আমরা যদি রমজান মাসের ত্রিশটি রোজা রাখি—তাহলে আমরাও হবো আল্লাহর হাত পুরুস্কারপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবানদের দলভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।

লেখক : অনুবাদক, সম্পাদক

আরো পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top