জুবাইব ইবনুল হারেস রা.। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন প্রিয় সাহাবি। তিনি একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জীবন গোনাহে জর্জরিত হয়ে গেছে। এখন এ থেকে মুক্তির উপায় কী?
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর কাছে তাওবা করো। সে বললো, যদি আবার অপরাধ হয়ে যায়? তিনি বললেন, আবার তাওবা করবে। সে বললো, যদি পুনর্বার অপরাধ করে ফেলি? তিনি বললেন, পুনরায় তাওবা করবে।
জুবাইব রা. এবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কতক্ষণ পর্যন্ত তাওবা করতে পারব? নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যতক্ষণ শয়তান জ্বলেপুড়ে বিতাড়িত না হয় ।
মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য শয়তানের মস্ত বড় এক অস্ত্র হলো—অপরাধীর চোখে অপরাধকে বড়ো করে দেখিয়ে আল্লাহর রহমতকে ছোট ও সংকীর্ণ করে তোলা। যাতে ব্যক্তি তাওবার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে।
মানুষ সামান্য অপরাধ করতেই ইবলিস এসে তাকে কু-মন্ত্রণা দেয়, আর বলে—হায় হায়! তুমি এটা কী করলে? এখন তো আর তোমাকে মুসলমান বলার কোনো সুযোগ নেই। অন্তত এ অপরাধ আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না।
এসব কু-প্ররোচনা দ্বারা সে নিজে যেমন আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত হয়েছে, তেমনি আমাকে আপনাকেও বিতাড়িত করার হরহামেশা চেষ্টা করে যাচ্ছে। মনে রাখবেন, শয়তানের এসব প্ররোচনায় কান দিতে নেই। কান দিলেন মানে —নিজের জীবনকে নিক্ষেপ করলেন ধ্বংসের অতল গহ্বরে।
আচ্ছা বলুন তো আমাদের আদর্শ কে? ইবলিস না আদম আলাইহিস সালাম? আমরা কার অনুসরণ করবো—আদমের না শয়তানের? অপরাধ তো দুজনই করেছে। তারপরও দুজনার মধ্যে রয়েছে আকাশ ও জমিনের চেয়ে বেশি ফারাক। একজনকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, অন্যজনকে দিয়েছেন জাহান্নামের নিশ্চয়তা।
ইবলিস অপরাধ করে অহঙ্কার করেছে। আর আদম অপরাধ করে তাওবা করেছে। কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চেয়েছে আল্লাহর দরবারে। অহংকারের পরিণতি হিসেবে ইবলিশ দীর্ঘজীবন আল্লাহর প্রিয়পাত্র থাকার পরও রহমত থেকে হয়েছে বিতাড়িত। আল্লাহর দয়া ও করুণা থেকে হয়েছে চির বঞ্চিত। অন্যদিকে তাওবার কারণে আদম আলাইহিসসালামকে তিনি কাছে টেনে নিয়েছেন। ক্ষমা করে দিয়েছেন তার ভুলভ্রান্তি।
মানুষকে অপরাধ করার প্রবণতা দিয়েই তৈরি করা হয়েছে। মানুষ অপরাধ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। তার অপরাধ না করাই বরং অস্বাভাবিক। এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা যদি গোনাহের কাজ না করতে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করে দিতেন। আর এমন জাতিকে নিয়ে আসতেন, যারা গোনাহ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চায়। অতএব আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতেন। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৪৯।
অতএব গোনাহ করা অপরাধ নয়, বরং গোনাহ করে তাওবা না করা হচ্ছে অপরাধ। গোনাহের কারণে কলবে যে কালো দাগ পড়ে, জীবনটা একটু কলুষিত হয়, তা ধুয়ে মুছে ধবধবে সাদা করার জন্য আল্লাহ তায়ালা ইস্তিগফার দিয়েছেন। তাই কখনো অপরাধ হয়ে গেলে অপেক্ষা না করে দ্রুত আল্লাহর কাছে তাওবা করুন। আবার হলে তাওবা করুন আবার। পুনরায় হলে ক্ষমা চান পুনরায়। যতবার অপরাধ হবে, ততবার ক্ষমা চান। আল্লাহর শপথ! এখানে হীনমন্যতা কিংবা লজ্জার কিছু নেই। কারণ গোনাহগারকে ক্ষমা করার জন্যই তো তিনি রহমান। পাপীকে মাফ করেন বলেই তো আল্লাহর নাম গাফফার। মনে রাখবেন, দুনিয়ার সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও একটি দরজা আপনার জন্য সব সময় খোলা থাকে। তাহলো—রবের দরজা। তাই সংকোচ, সংশয় ও লজ্জা ঝেড়ে ফেলে হাজিরা দিন এ দরজায়। বিশ্বাস রাখুন—নিশ্চিতভাবে আল্লাহ আপনাকে মাগফিরাতের চাদরে ঢেকে নিবেন।