উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা দ্বিতীয় পত্রে দিনলিপি রচনা নির্মিতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তবে দিনলিপি লেখার নিয়ম hsc না জানার কারণে সহজ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
ইংরেজি Diary এসেছেন ল্যাটিন শব্দ Diarium থেকে। শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ ব্যক্তিগত দৈনিক জীবনযাত্রার কাহিনী বা দিনলিপি। এটির ফার্সি পরিভাষা রোজনামচা। অর্থাৎ দিনলিপি হচ্ছে তা-ই, যেখানে মানুষ তার প্রতিদিনের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো লিপিবদ্ধ করে।
দিনলিপি লেখার নিয়ম hsc বাংলা ২য়
১. দিনলিপির পৃষ্ঠার একেবারে উপরের ডান বা বাম পাশের তারিখ ও বারের নাম লিখতে হয়। কেননা এর মাধ্যমে বোঝা যায় ঘটনাটি কত তারিখে এবং কি বারে ঘটেছিল।
২. দিনলিপিতে ঘটনার সময় ও স্থানের নাম লিখতে হবে এর মাধ্যমে ঘটনাটির সময় ও স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
৩. দিনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা এর বিস্তারিত বিবরণ নয়, বরং উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৪. দিনলিপিতে সহজ, সরল, স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ ভাষায় কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কোন বিশেষ ভাবনা চিন্তা বা কৌতূহলজনক কিছু লিখে রাখা হয়।
৫. দিনলিপিতে নিজের বা উত্তম পুরুষ (আমি, আমরা) লেখা হয়।
৬. দিনলিপিতে সাধারণত কোন অনুষ্ঠান, কোন বিপর্যয়, কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কোন বিশেষ ভাবনাচিন্তা বা কৌতূহলজনক কিছু লিখে রাখা হয়।
৭. দিনলিপির ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত চরিত্রগুলোর পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।
৮. দিনলিপিতে লেখক এর বর্ণনা বা বিবরণ গোছালো ও পরিচ্ছন্ন লেখা হওয়া উচিত।
৯. দিনলিপি একান্ত ব্যক্তিগত রচনাবলী। এতে নিজস্ব অভিমত দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ইত্যাদি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করা চলে।
১০. দিনলিপিতে সব সময় সত্য ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।
দিনলিপির নমুনা এইচএসসি
১. অসুস্থ বন্ধুকে/সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বন্ধুকে দেখতে যাওয়ার দিনলিপি
১৮মার্চ, ২০২২
আজ সকালে অয়ন ও রূপমকে সঙ্গে নিয়ে সুজিতকে দেখতে গেলাম। সুজিত আমাদের সহপাঠী বন্ধু। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সুজিত পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি। আমাদের কলেজের সবচেয়ে মেধাবী,সুদর্শন,নম্র,ভদ্র ছেলে সুজিত। ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্কুলজীবন থেকেই তার সুনাম। ঘাতক ট্রাক সেই সুজিতের একটি পা কেড়ে নিয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল সুজিতের মুখটি বিবর্ণ, ফেকাসে, প্রচন্ড ম্লান হয়ে গেছে। দেখলে বন্ধু বলে নয়, যেকোনো হৃদয়বান মানুষের চোখে জল আসবে। অয়ন সহ্য করতে পারল না,মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগল।
আমি আর রূপম নির্বাক প্রস্তুর ফলকের মতো নিস্পন্দ হয়ে আছি। সুজিতে ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে আমাদের দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বিছানা ছেড়ে হঠাৎ উঠতে গিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কাছে হার মানল। আমরা তাকে উঠতে বসতে সাহায্য করলাম। সুজিত আমার নোটবুকটি হাতে নিয়ে কলম চাইল। কলম নিয়ে নোটবুকের এক জায়গায় লিখল- আকস্মিক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের সবসয় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। সুজিতের এ মবোবলকে আরও বাড়িয়ে দিল।
২. বৈশাখী মেলা’ শিরোনামে দিনলিপি
১০এপ্রিল,২০২২
ঘিউর, মানিকগঞ্জ।
বৈশাখ মেলা আমাকে খুব কাছে টানে। এর মধ্যে আমি যেন শেকড়ের সন্ধান পাই। আবহমান বাঙালি ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটে মেলার মধ্য দিয়ে। তাই আমি প্রতিবছরই ছুটে যাই আমার গ্রামে। আর মেলার জন্য মাটির ব্যাংকে টাকা জমাই। যা দিয়ে চাচাত ভাই বোনদের নিয়ে বেশ আনন্দে কাটানো যায়। এবার মেলার আগের দিন চলে এসেছি। আমাকে পেয়ে ওদের মনে খুশির বান এলো। কে কী করবে, কে কী কিনবে তাই নিয়ে হৈচৈ আর জল্পনা কল্পনা।
গল্পে গল্পে অনেক রাত হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ডেকে তুললাম। হুড়মুড় করে উঠে সবাই ঝটপট তৈরি হয়ে নিল। এক টেম্পোএ উঠে সবাই একসঙ্গে নামলাম মেলাস্থলে। শুরুতেই বাঁশিওয়ালার উদাস করা সুর। সৈকত বাজিয়ে দেখে একটা বাঁশি কিনল পছন্দ করে। তারপর নাগরদোলা,কেউ উঠল না। কারণ গত বছর কিসলু পড়ে গিয়েছিল। সামনেই মিষ্টির দোকান। গরম গরম জিলাপি আর রসগোল্লা খেল সবাই। ঐশী আর বাবলি চুড়ি কিনল হরেক রকম। মিন্টু আর রিন্টু কিনল মাটির ঘোড়া, হাতি, বউ আর মাটির ব্যাংক।
তাপস পছন্দ করল মাটির চমৎকার একটা ফুলদানি। ডানপাশে বাঁশ আর বেতের তৈরি নানা তৈজসপত্র সাজানো। বামপাশে লোহার তৈরি দা, কুড়াল, কোদাল, খুন্তি, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহারিক জিনিসপত্র বেচাকেনা হচ্ছে। আরও সামনে কাচের নানা রকম জিনিস সাজানো। পাশেই কাঠের তৈরি নানা সামগ্রী। এরপরে আছে শরবত আর ফলের দোকান। বেলুনের দোকানগুলো থেকে একগাদা নানা রঙের বেলুন কিনল মিন্টু রিন্টু। ক্ষুধা পেয়েছে। অথচ পরোটা মিষ্টি ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার উপায় নেই। তাই খেলাম সবাই। বেরিয়ে এসে লাঠিখেলা দেখলাম এক পর্ব। লটারি ধরলাম, কিন্তু পেলাম না। মন খারাপ হলো। দেখলাম বানরের নাচ। তারপর টেম্পোতে করে সোজা বাড়ি ফিরে এলাম।