জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যাা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করাকে ইসলামে কোরবানি বলে। কুরবানি ফরজ নয় বরং ওয়াজিব তবে, শুধু মাত্র নির্দিষ্ট সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিদের উপর কুরবানি করা ওয়াজিব।
ইসলামে কুরবানীর ইতিহাস বেশ প্রাচীন। আল কুরআনে হাবিল এবং কাবিলের উল্লেখ পাওয়া যায়। হাবিল প্রথম মানুষ যে আল্লাহর জন্য একটি পশু কুুরবানী করেন । ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, হাবিল একটি ভেড়া এবং তার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে।
কোরবানির আয়াত ও হাদিস
(১)
হে নবী! কিতাবিগণকে আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালো করে বর্ণনা করো। তারা যখন কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো। কিন্তু অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল, আমি তোমাকে খুন করবো। অপরজন বলল, প্রভু তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের কোরবানিই কবুল করেন।
— সূরা মায়েদা, আয়াত-২৭
(২)
হে নবী! ওদের বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ-আমার সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এ আদেশই আমি পেয়েছি। আমি সমর্পিতদের মধ্যে প্রথম।
— সূরা আনআম, আয়াত ১৬২-১৬৩
(৩)
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে।
— সূরা হজ, আয়াত ৩৪-৩৫
(৪)
কোরবানির পশুকে আল্লাহ তাঁর মহিমার প্রতীক করেছেন। তোমাদের জন্যে এতে রয়েছে বিপুল কল্যাণ। অতএব এগুলোকে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় এদের জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। এরপর এরা যখন জমিনে লুটিয়ে পড়ে, তখন তা থেকে মাংস সংগ্রহ করে তোমরা খাও এবং কেউ চাক না চাক সবাইকে খাওয়াও। এভাবেই আমি গবাদি পশুগুলোকে তোমাদের প্রয়োজনের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো।
— সূরা হজ, আয়াত ৩৬
(৫)
কিন্তু মনে রেখো কোরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। হে নবী! আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
— সূরা হজ, আয়াত ৩৭-৩৮
কুরবানি সম্পর্কে হাদিস
(১)
উকবা ইবনু আমির জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগনের মধ্যে কতগুলো কুরবানীর পশু বণ্টন করলেন। তখন উকবা (রাঃ) এর ভাগে পড়ল একটি বকরীর বাচ্চা। উকবা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ভাগে এসেছে একটি বকরীর বাচ্চা। তিনি বললেনঃ সেটিই কুরবানী করে নাও। (সহিহ বুখারি-২২০৬)
(২)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া দ্বারা কুরবানী করেছেন। তখন আমি তাকে দেখতে পাই তিনি ভেড়া দু-টোর পার্শ্বদেশে পা রেখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়ে নিজের হাতে সে দুটোকে যবাহ করেন। (সহিহ বুখারি-২২১৩)
(৩)
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দেওয়ার সময় বলতে শুনেছি আমাদের আজকের এই দিনে সর্ব প্রথম আমরা যে কাজটি করবো তা হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায়। এরপর আমরা ফিরে গিয়ে কুরবানী করবো। যে ব্যাক্তি এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে। আর যে ব্যাক্তি পূর্বেই যবাহ করে তা তার পরিবার পরিজনের জন্য অগ্রিম মাংস (হিসেবে গন্য), তা কিছুতেই কুরবানী বলে গণ্য নয়। তখন আবূ বুরদা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি সালাত আদায়ের পূর্বেই যবাহ করে ফেলেছি এবং আমার কাছে একটি বকরীর বাচ্চা আছে। যেটি পূর্ণ এক বছরের বকরীর চাইতে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সেটিকে কুরবানী কর। তোমার পরে এ নিয়ম আর কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না কিংবা তিনি বলেছেনঃ আদায় যোগ্য হবে না। (সহিহ বুখারি-২২১৫)