ওমরা শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হলো— ধর্ম, কর্ম, ইবাদত, সুখকর, স্থিতিশীল, জীবন, মহাপ্রাচীন, সেবা, স্থাপত্য-স্থাপনা, প্রাপ্তি, অভ্যর্থনা, জিয়ারত, সফর, ইচ্ছা ইত্যাদি। যিনি ওমরা করেন, আরবিতে তাঁকে ‘মুতামির’ বলা হয়। (লিসানুল আরব)।
ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করার নাম হলো ওমরা। নির্দিষ্ট স্থান হল কাবা, সাফা ও মারওয়া৷ আর নির্দিষ্ট কর্ম হলো— ইহরাম, তাওয়াফ, সায়ি, মাথা মুণ্ডন ইত্যাদি।
ওমরার ব্যাপারে আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِ
‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাকে পূর্ণ কর। সূরা বাকারা : ১৯৬
হাদিসে ওমরার অগুনতি ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— ‘এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ মাঝখানের গোনাহগুলোর জন্য কাফফারা স্বরূপ।’ বুখারি, হাদিস নং— ১৬৮৩; মুসলিম, হাদিস নং— ৩৩৫৫
ওমরা বান্দার গোনাহ মাফের অন্যতম কারণ। এছাড়া এর মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনও হয়। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
تابعوا بين الحج والعمرة فإنّهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكيرُ خبثَ الحديد والذهب والفضة».
তোমরা হজ ও ওমরা করতে থাকো। কেননা এ দুটিই দারিদ্র্য বিমোচন করে এবং গুনাহ দূর করে, যেভাবে হাঁপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে। সুনানু নাসায়ি, হাদিস নং— ২৬৩১; তিরমিজি, হাদিস নং— ৮১০।
ওমরাকারীর দুয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। আর পূরণ করেন তার মনোবাঞ্ছাও। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
الغازي في سبيل الله، والحاجّ، والمعتمر وفد الله دعاهم فأجابوه وسألوه فأعطاهم».
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী, হজকারী এবং ওমরাকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তাদের দুয়া আল্লাহ কবুল করেন। আর তারা যা চায়, আল্লাহ তা-ও তাদেরকে দান করেন। ইবনে মাজাহ, হাদিস নং— ২৮৯৩; ইবনে হিব্বান, হাদিস নং—৪৬১৩
উমরার কারণে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে নামাজ আদায়ের সুযোগ লাভ হয়। আর এই দুই মসজিদে নামাজ আদায়ের ফজিলত বর্ণনা করে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صلاة في مسجدي أفضل من ألف صلاة فيما سواها إلا المسجد الحرام وصلاة في السمجد الحرام أفضل من مئة ألف صلاة فيما سواه».
আমার মসজিদে (মসজিদে নববিতে) এক রাকাত নামাজ পড়া, মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যত্র এক হাজার রাকাত নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। আর মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ পড়া অন্যত্র এক লাখ রাকাত নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। তিরমিজি, হাদিস নং— ৩২৫
সকল মাজহাবের আলিমদের ঐক্যমতে ওমরা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদাত। হানাফি ও মালেকি মাজহাবের ইমামদের মতে ওমরা করা সুন্নত ও মুস্তাহাব। ওয়াজিব নয়। আর শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের ইমামদের মতে ওমরা করা ওয়াজিব।
