Search
Close this search box.

জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান এবং তাদের অবস্থান

Jamalpur

জামালপুর বাংলাদেশের একটি জেলা যা ময়মনসিংহ বিভাগের অংশ। এটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুর ১১ নম্বর সেক্টর ছিল এবং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন আবু তাহের বীর উত্তম। ১৯৭১ সালের ২১শে জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় ব্রহ্মপুত্রের তীরে জামালপুর সদর উপজেলার শ্মশান ঘাটে (শ্মশান কেন্দ্র) ৯ জনকে হত্যা করে। ৩১শে জুলাই বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটিতে বাঙালি যোদ্ধারা এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এই যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, আহাদুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদসহ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৩ নভেম্বর বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে বাঙালি সৈন্যদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এতে তাহের গুরুতর আহত হন।

জামালপুর জেলার অন্যতম ৫টি দর্শনীয় স্থান: 

১. মালঞ্চ জামে মসজিদ

মালঞ্চ জামে মসজিদ জামালপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি। জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ শিশু ও চক্ষু হাসপাতালে অবস্থিত সুন্দর মালঞ্চ জামে মসজিদ। প্রাক্তন সচিব ও ইউনাইটেড ট্রাস্টের সহযোগিতায় মাজার, মসজিদ, কামিল মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং ইসলামী মিশনের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশে দর্শনীয় মালঞ্চ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে।

সবুজ গাছ-গাছালিতে ঘেরা গম্বুজ বিশিষ্ট মালঞ্চ মসজিদের সামনে রয়েছে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণা। মালঞ্চ মসজিদ তার নান্দনিক সৌন্দর্যের কারণে জামালপুর জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে।

২. শাহ্ জামালের মাজার

পীর শাহ জামালের ( এ অঞ্চলের একজন বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ) মাজার জামালপুর জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে চাপাতলী ঘাটের কাছে অবস্থিত। শাহ জামাল মাজার জামালপুরের একটি ঐতিহাসিক স্থান। সম্রাট আকবরের শাসনামলে  ১৫৮৬ সালে হযরত শাহ জামাল (রহ.) ধর্ম প্রচারের জন্য ইয়েমেন থেকে এ অঞ্চলে আসেন।

সূফী দরবেশ পীরে কামেল হযরত শাহ জামাল (রঃ) মুঘল দরবারে ধর্ম প্রচার করেন। তখন বাদশাহ আকবর হযরত শাহ জামাল (রঃ) এর সমস্ত খানকা শরীফের খরচ বহন করতে আগ্রহী হন। তিনি হযরত শাহ জামাল (রঃ) এর কাছে কয়েকটি পরগণার অনুদানের সনদও পাঠান। কিন্তু হযরত শাহ জামাল (রঃ) এই লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। হযরত শাহ জামাল (রঃ) এর কারণে এ অঞ্চল জামালপুর নামে পরিচিতি লাভ করে।

আরও পড়ুন  বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা

৩. দয়াময়ী মন্দির, জামালপুর

দয়াময়ী মন্দির জামালপুর জেলা শহরের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। নবাব মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে ১৬৯৮ সালে শ্রী কৃষ্ণ রায় চৌধুরী  মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ৬৫ শতাংশ  জমিতে নির্মিত দয়াময়ী মন্দিরে শিব, কালী, নাটমন্দির এবং মনসা দেবীর মন্দির আলাদাভাবে স্থাপন করা হয়েছে। দয়াময়ী মন্দিরে ১০০ বছরের পুরনো খোদাই করা দর্শনীয় চিত্রকর্মও রয়েছে ।

৩২১ বছরের পুরানো দয়াময়ী মন্দিরটি প্রতিদিন খোলা থাকে এবং প্রতি বছর অষ্টমী মেলায় যোগদানকারী হিন্দুরা এর বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে ঐতিহাসিক মন্দিরটি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

৪. লুইস ভিলেজ রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক

জামালপুর জেলার বেলটিয়ায় নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠেছে লুইস ভিলেজ রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক। ২০১৬ সালে প্রায় ১০ একর জুড়ে নির্মিত পার্কটি ইতিমধ্যেই ময়মনসিংহ বিভাগের সর্বশেষ বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লুইস ভিলেজ রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক জামালপুরের একটি দুর্দান্ত পিকনিক স্পট। লুইস ভিলেজ রিসোর্ট অ্যান্ড পার্কে ১৪ টি দেশী এবং বিদেশী রাইড রয়েছে, যার মধ্যে একটি ওয়ান্ডার হুইল, বাম্পার কার, সুইং চেয়ার, মেরি গো রাউন্ড, মিনি ট্রেন, কফি কাপ এবং বোট রাইডিং রয়েছে।

৫. লাউচাপড়া পিকনিক স্পট 

লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্র বা লাউচাপড়া পিকনিক স্পট বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। লাউচাপড়ার পাহাড়, বন, হ্রদ ও দেশীয় জীবনধারা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সজ্জিত এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। জামালপুরে এটি একটি বিস্ময়কর পর্যটন স্পট যেখানে যে কেউ যেতে পারে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে জামালপুর জেলা পরিষদ ১৯৯৬ সালে গারো পাহাড়ে ২৬ একর জমি জুড়ে একটি ‘নিকা’  পিকনিক স্পট নির্মাণ করে। পিকনিক স্পটে প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের উপরে আরেকটি ৬০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এই ওয়াচটাওয়ারের উপর থেকে, সবুজ পাহাড়ের সারি মেঘের লুকোচুরি খেলা এবং চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top